BENGALI LETTERS FROM PATRAM PUSHPAM\\
This is the 51 st letter of patram pushpam
৫১
শিলং
১৪।৬।৫৮
গোপীচিত্তে অকৈতব ভালবাসা যেমন সত্য, তেমনি মান ঈর্ষা অসূয়া এগুলোও সত্য । অর্থাৎ অপ্রাকৃত এবং প্রাকৃত দুয়ের মিশ্রণ এখানে হচ্ছে অথচ কোনও বিরোধ দেখা দিচ্ছে না । এ ব্যাপারটা আমাদের যুক্তি বুদ্ধির বাইরে । কিন্তু তা বলে মিথ্যা তো নয় । যুক্তি বলবে, দুঃখ সুখ নয়, সুখ দুঃখ নয় । কিন্তু প্রেম বলবে ঃ তাঁর জন্য দুঃখ পেয়েও সুখ । এখানে সুখ একটা এমন অতিশয়ী তত্ত্ব, যা দুঃখকে স্বরূপে রেখেই গ্রাস করে । যখন ব্রহ্মের দিক থেকে জগৎকে দেখি, তখন কি বিদ্যা আর অবিদ্যার মধ্যে তফাৎ করতে পারি ? বলি না কি যে অবিদ্যাও বিদ্যার তির্যক্ ভঙ্গি ? আমাদের দিক থেকে দেখবার সময় বলি অবিদ্যা বিদ্যাকে ঢেকে রেখেছে আমরা অবিদ্যাকে চাই না বিদ্যাকেই চাই । কিন্তু অবিদ্যাকে বাদ দিয়ে বিদ্যাকে শুধু নিলে তো সব নেওয়া হল না । বিদ্যা দিয়েই অবিদ্যাকে গ্রহণ করতে হবে । ব্রহ্মের আলোতেই ছায়ার সম্পাত হয়েছে, ছায়া আোরই খেলা । তবে আলো পরম, ছায়া তার আশ্রিত ।
ঠিক এই কথাগুলি গোপীপ্রেমেও খাটে । গোপীপ্রেমের যে দিকটা আমরা বুঝতে পারিনা, সে হচ্ছে খণ্ডিতা নায়িকার মান । ‘ বহুবল্লভকে ভালবেসে সব দিয়েছি, সে যদি দুপায়ে আময় মাড়িয়েও যায়, তবুও সে লম্পটই আমার প্রাণনাথ’ (মহাপ্রভুর উক্তি ) । এটা হল ভালবাসার চরম প্রকাশ । কিন্তু তা বলে তার উপেক্ষা আমার বুকে বাজবে না ? বুকে বাজে বলেই তীব্র অভিঘাতে চিত্ত আলোড়িত হয়ে ওঠে, আর ভালবাসাকে মনে হয় যেন ‘তপ্ত ইক্ষু চর্বণ’ – আনন্দ – বেদনায়- বিষে- অমৃতে মেশানো এক তীব্র মধুর রসায়ন । তুমি ব্যথা দিচ্ছ তবুও তোমায় ভাল না বেসে পারছি না । চেতনায় তখন দুঃখ আর দুঃখবাদ দুয়েরই একান্ত স্বীকৃতি । ভালবাসা শুধু সুখ নয় আছে তীব্র বেদনাও আছে বঞ্চনার দুঃখ যা বিরহের চাইতেও নিদারুণ। এই তিক্তটাকে যদি স্বীকার না করি, জগতের সবটুকুকে তো স্বীকার করা হল না । আর এই তিক্ততাই চেতনাকে তীব্র করে তোলে , আর তাইতে গোপীহৃদয়ে ভালবাসারও নতুন নতুন বেদনামধুর অভিব্যক্তিতে এক লোকোত্তর অনুভবের সৃষ্টি হয় । মহাপ্রভুর সমস্ত জীবনটা এই বঞ্চনার হাহাকার । ভগবানকে ভালবাসলে এমনি হয় । দুঃখের বিলাসে প্রেমের অপরূপ পরিচয় পাই তখন । তোমাকে পেয়েও যে পাই না, “ আমার বঁধুয়া আন বাড়ী যায় আমার আঙিনা দিয়া” – আর তারই সুতীব্র দাহ নিয়ে যে তাকে আরও গভীর করে আঁকড়ে ধরি, অথচ পাই না- এই আর্তির উল্লাসের, ‘হিয়াদগদগি পরাণপোরানি’র কি তুলনা আছে সুধা ? এ জ্বালা মেয়েরাই বোঝে, বোঝে এ কী অনির্বচনীয় অমৃত-হলাহল । যাই । স্নেহাশিস ।
This is the 52 letter of patramn pushpam
৫২
হৈমবতী
৯।৮।৫৮
মানুষের সঙ্গে চলতে গিয়ে প্রত্যাশা ছাড়তে হয় সবার আগে । কিছু প্রত্যাশা করলেই আঘাত পাবে । যা আসবে আসতে দাও-আগে থেকে কিছু ভেবে রেখো না । তারপর সমুদ্রের ঢেউ তোমার উপর দিয়ে গড়িয়ে যাক । তুমি আবার সব ভুলে গিয়ে আপনাতে আপনি থেকে যাও ।
আশা করি শরীরটা ভাল আছে । স্নেহাশিস ।
This is the 50 th letter of paatram pushpam
৫০
শিলং
৮।৩।৫৮
আজ তোমার হোলির ফাগ পেলাম। বাইরের দোল থেমে গেছে। কিন্তু অন্তরের দোল তো কোন ও দিনি থামে না। আশীর্বাদ করি ,তোমার অনুরাগ নিত্য নতুন রঙে তাঁকে রাঙিয়ে দিতে পারে যেন । স্নেহাশিস নিও ।
This is the 49 th letter of paatram pushpam
৪৯
শিলং ১।৩। ৫৮
‘ একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি ‘, সেই একই বহু হয়েছেন। এই ভাব থেকে বুঝলে বৈচিত্র্যগুলির মাঝে একটা সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায় । তত্ত্বের আসল pattern টা এই –
শূন্য – এক – দুই –ভু
নির্বিশেষ – যুগনদ্ধ – যুগল –বিভূতি
বুদ্ধ – শঙ্কর – সাংখ্য – তন্ত্র-পুরাণ
দুই থেকে ধর – পুরুশ আর প্রকৃতি । এটা জাগ্রৎ অবস্থা । কিন্তু মিলন স্বপ্নে দুইএ এক । স্বপ্ন গাঢ় হলে আর কিছুই থাকে না । তখন শূন্য । জাগ্রৎ অবস্থায় পুরুষের দ্বারা আবিষ্ট প্রকৃতির বহু সন্ততি । এক আদি মিথুন অগণিত মিথুনে অভিব্যক্ত হচ্ছে । অভিব্যক্তির দিক দিয়ে উজিয়ে যাওয়া বড় কঠিন – ধারণা পরিষ্কার হতে চায় না । কিন্তু মূল থেকে যদি অভিব্যক্তির দিকে যাও – সব সোজা হয়ে যাবে ।
ধর, শিব-সতী – অথবা দর্শনের ভাষায় চৈতন্য এবং তার স্ফুরত্তা (dynamism)। Dynamism টা আনন্দ – তারই উল্লাসে জগৎ । বিচিত্র উপায়ে রসসম্ভোগ । এই দৃষ্টিতে দেখলে সব বোঝা যায় । সাধকরা প্রায়শই অগ্রসর হন এককে ধরে । কেউ চৈতন্যের কোনও একটা দিক ধরে,কেউবা শক্তির কোনও একটা দিক ধরে । চিত্তের একাগ্রতার জন্য এমনটা করা দরকার হয় । কিন্তু লয় হয়ে গেলে একটা অখণ্ড সমরস ও সমগ্র একত্বের অনুভূতি হয় । তা থেকে বিভূতি বেরিয়ে আসে । সিদ্ধ তখন কোনও দ্বন্দ্ব থাকে না । কিন্তু সাধক থাকার সময়ের যে সংস্কার ছিল, তা প্রায়শই মরে না বলে সম্প্রদায়-ভেদ দেখা দেয় ।
কেউ ধরলেন কালী । শক্তির একটা দিক । কিন্তু চরমে গিয়ে কালী ব্রহ্মই হয়ে গেলেন । তখন সবই কালী । তবুও হয়তো মা-মা বলে ডাকছেন । তাতে একটা ভাবের উপর জোর দেওয়া হল । অথচ সব সিদ্ধ পুরুষই জানেন,” জননী তনয়া-জায়া সহোদরা কি অপরে ?” “ তুমি কখনও পুরুষ হও মা, কখনও ষোড়শী নারী ।“ রূপ থেকে অভিযান শুরু করলে রূপের সংস্কার থেকে যায় । তাতে সিদ্ধচেতনার ক্ষতি হয় না, কিন্তু প্রবর্ত সাধক অনেক সময় ভুল বোঝে । বলে কালী বড়, দুর্গা ছোট ইত্যাদি ।
মূল থেকে স্থূলের দিকে আসাই ভাল । ঐ যে ছকটা দিলাম, তারই মাঝে ভারতবর্ষের সাধনার মূল সূত্রগুলি পেয়ে যাবে ।
ভাল থেকো । স্নেহাশিস ।
This is the 48 th letter of patram pushpam
৪৮
হৈমবতী
১৮।১।৫৮
আকাশের তলায় সবাই আছে, সবাই আলোর ধারায় স্নান করছে । একই বাতাসে সবাই নিঃশ্বাস নিচ্ছে । তখন তো আমরা বিচার করি না কে ভাল ,কে মন্দ। কিন্তু বন্ধ ঘর হলেই বিপদ ।তখন দুজনের নিঃশ্বাসেও বাতাস যেন বিষিয়ে ওঠে ।
খৃষ্টচিত্তও অমনি আকাশের মত, আলোর মত, বাতাসের মত । তিনি যে ‘আকাশ আনন্দঃ,’ ‘ অনিলমমৃতম্’, তার মাঝে থেকেও মানুষ বুঝতে পারে না । তবুও বিদ্যাশক্তি তো অকৃপণ হয়েও অবিদ্যার উপর আলো ঢেলে চলে । না ঢেলে কীই বা করত । ঐ যে তার স্বভাব ।
অবিদ্যার রূপান্তর হয় । কিন্তু বড় ধীরে ধীরে । তাতেও দুঃখ নাই তাঁর – যিনি এক ঝলকে একটা যুগকে দেখেছেন ।
ভাল থেকো, আনন্দে থেকো । স্নেহাশিস ।
This is the 47 th letter of paatram pushpam
৪৭
হৈমবতী
৪।১।৫৮
মহাপুরুষকে যে শক্তিটা ক্রুশবিদ্ধ করে – সোজা কথায় তাকে বলতে পারি নির্বুদ্ধিতা। শাস্ত্রে যাকে বলে অবিদ্যা । ওটা ঠিক প্রলয়ের শক্তি নয় – চেতনার একটা ধূমাচ্ছন্ন অবস্থা । চিত্তের জড়ত্ব থেকেই ওটা আসে । সঙ্গে-সঙ্গে ছোট-খাট ভোগাসক্তি তো আছেই । চেতনা সঙ্কীর্ণ হয়ে আছে, তখন বাইরে থেকে কোনও বাধা এলেই সে রুখে দাঁড়ায় । সংসারের ছোটখাট ব্যাপারেও আমরা অহমিকার বিশ্রী অনমনীয় ক্রিয়াটা দেখতে পাই না ? তুচ্ছ কারণে আমরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠি, সঙ্গে সঙ্গে ওটাকে আমাদের ‘righteous indignation’ বলে নিজের কাছে নিজেই সমর্থন করি । এই জিনিষটাই আমাদের ‘ অশুশ্রূষু’ করে । আমরা ভালকথা শুনতে চাই না, শুনলে বিরক্তি ধরে । যিশুকে যারা ক্রুশবিদ্ধ করেছিল, তারা নিতান্তই ছোটলোক । যিশুর সামনে দাঁড়াবার যোগ্যতাই তাদের ছিল না । তারা যদি তাকে challenge দিতো, তাহলেই খানিকটা সান্ত্বনা ছিল । তা তো নয় । মহান্ কে চিরকাল এমনি করে ক্ষুদ্রের অবজ্ঞা এবং অত্যাচার সইতে হয়েছে । তবে এটা evolution এর একটা phase । আমরা এখন আর অতটা অসহিষ্ণু নই । কিন্তু নির্বুদ্ধিতা যে গেছে, তো নয় । আমার বাজে, যখন দেখি, ছোট-খাট ব্যাপারেও আমরা সুন্দরের গায়ে কালি ছিটিয়ে একরকম তৃপ্তি পাই । এও তো crucifixion ।
আশা করি ভাল আছ । স্নেহাশিস নিও ।
This is the 46 th letter of patram pushpam
৪৬
শিলং,৭।১২।৫৭
সাংসারিক পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে,বিশেষত নাগরিক জীবনে । কোথাও কারও কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করাটা নিরাপদ নয় ।ঘটনাস্রোত যেদিকে নিয়ে যায়,নিয়ে যাক ......... বাধা দিয়ে লাভ নাই ।সবই তার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া ভাল । স্নেহাশিস নিও ।
This is 45 th letter of patram pushpam
৪৫
হৈমবতী
শিলং,২৬/১০/৫৭
মহাপুরুষদের প্রত্যেকের plane তাঁদের সংস্কার সিদ্ধি ও শক্তি অনুযায়ী । তবে এখানে অন্তরঙ্গ বহিরঙ্গ ভেদ অবশ্যই আছে ।সবাই সবটুকু ধরতে পারে না । আকাশবৎ ব্যাপ্তির দিকটা অবশ্য সর্বজনীন । কিন্তু আকাশের গভীরতা এবং সর্বগামিত্বও আছে । তাও কিন্তু ঐ ব্যাপ্তির সুরেই বাঁধা । তাইতে প্রাকৃত সম্পর্কও তাঁদের বেলায় স্বধর্ম না হারিয়ে প্রাকৃত হয়ে ওঠে । সূর্যের আলো ফুলের মর্ম কোষে প্রবেশ করে তাকে স্পন্দিত করে ,ফুটিয়ে তোলে, ফলে পরিণত করে- এও তেমনি । আকাশের তুঙ্গতা ব্যাপ্তি এবং গভীরতা কোনটারই শেষ নাই ।
আশা করি,ভাল আছ । স্নেহাশিস ।
This is 44 th letter of patram pushpam
৪৪
শিলং বিজয়া ১৩৬৪
তুমি আমার ঁবিজয়ার স্নেহাশিস নিও ।
আনন্দলহরী সম্বন্ধে কোনও লেখা দিচ্ছি না –এবার আটটি শ্লোকের পদ্যানুবাদ দিয়েছি পূজায় । আবার বাসন্তী – পূজায় । আবাড় বাসন্তী –পূজায় দেব ।
শ্রী বিদ্যার সাধনা করতে গিয়ে পাগল হয়ে যেতে পারে মানুষ – এ আশ্চর্য নয় । কিন্তু সেটা ব্যাতিক্রম । জীবনে যদি শ্রী না ফুটল, তাহলে তো কিছুই হল না । সমস্ত প্রকৃতি জুড়ে তো এই শ্রী আর সৌষম্যের সাধনাই চলছে ।
this is the 43 letter of patram pushpam
৪৩
হৈমবতী
শিলং,২৪।৮।৫৭
........ ........... ..............................................
মেয়েদের অবস্থা আমার মনে হয়,আজকালও যা আগেও তাই ছিল । ভারতবর্ষে কোনও কিছুর পরিবর্তন খুব সহজে হয় না ।প্রায় দুশো বছরের বিদেশী সভ্যতার অনিরুদ্ধ প্রভাবেও কি আমাদের সমাজব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে ? পৃথিবীর সর্বত্রই মেয়েদের স্থান সমাজে গৌণ । পুরুষই সেখানে সর্বেসর্বা । মেয়েরা অবগুণ্ঠিত হয়ে তাদের পেছনে পেছনে চলেছে মাত্র । এর মধ্যে এক ভারতবর্ষেই তাদের আত্মগৌরব বাড়াবার খানিকটা চেষ্টা করা হয়েছে ।
ধর্মে শক্তি সাধনার স্থান একমাত্র ভারতবর্ষেই আছে – ইসলামেও নাই,ক্রিশ্চিয়ানিটিতেও নাই । নারীচেতনার পূর্ণাভিব্যাক্তির দুটি দিককেই আমাদের দেশে অধ্যাত্মসাধনায় খুব বড় একটা স্থান দেওয়া হয়েছে । নারী মা - আমাদের অধ্যাত্মসাধনায় কুমারীজননী ঊমা - তাই আমাদের ইষ্ট দেবী । আবার নারী প্রিয়া - অতএব আমাদের সাধ্য শিরোমণি । জ্ঞানের দিক দিয়ে নারী পুরুষের মাঝে সাম্যের কথা বুদ্ধদেব বলেছিলেন - তাই আমরা বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের পেয়েছিলাম এককালে । নারীর অধ্যাত্মসাধনা এরই মধ্যে বাস্তব রূপ ধরেছিল ।
উমা আর রাধা দুইই abstraction । তবুও আমাদের সমাজে মাতৃভক্তি একটা বিশিষ্ট স্থান পাওয়ায় নারীর মর্যাদা খানিকটা খণ্ডিত হয়েছে । কিন্তু কোনও নারীকে উমা হতে বা রাধা হতে আমরা শিক্ষা তো দিই না । প্রাণের আবেগে নারীরা যতটুকু করে – আমরা সচেতনভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করি না । বাংলা দেশের মেয়েদের কাছে শিব অনেক দূরে । বালগোপাল আর কিশোরকানু দুয়ের ভিতর দিয়ে তারা তাদের অধ্যাত্ম পিপাসা খানিকটা চরিতার্থ করবার সুযোগ পায় মাত্র । অধ্যাত্মসাধনায় নারীকে একটা মুখ্য স্থান দেবার চেষ্টা করল তন্ত্র । কিন্তু সে চেষ্টা সমাজে স্বীকৃতি পেল না। বামাচারী তান্ত্রিক নারীকে সাক্ষাৎ উমা বলে পূজা করল, সহজিয়া তান্ত্রিক তাকে সাক্ষাৎ রাধা বলে ভজনা করল । কিন্তু এই দুটা পথই সমাজবহির্ভূত । আর এই দুটাতেই নারী – exploited ই হয়েছে,যেমন হচ্ছে সে সমাজে । এক বৌদ্ধ যুগের প্রথমটায় ছাড়া নারী আজ পর্যন্ত তার স্বাধিকার পায়নি বলতেই হবে । এই হল এ দেশের অবস্থা । অন্যান্য ধর্মে তো নারী সম্পূর্ণ বিবর্জিতা । Islamic God নারী সম্পর্কশূন্য,Christian God - ও তাই । Mary Virgin Mother হয়েও ঈশ্বর শক্তি নন ।
আশা করি ভাল আছ । স্নেহাশিস ।
This is the 42nd letter of patram pushpam
42
হৈমবতী
শিলং, ২৭।৭।৫৭
...... ............................................. ..........................
তোমার মাঝে শক্তি আছে । তাকে বাঁধ । চেষ্টায় বাঁধা যায় না । নিজেকে এলিয়ে দিতে হয় তাঁর কাছে। গুণীর কোলে বীণা পড়ে আছে নিঃসাড় হয়ে ; সে কি চায় তা জানে না, জানবার দরকারও নাই । শুধু জানে তাঁর অন্তরের সব সুরই তার বুকে ঘুমিয়ে আছে। যখন যেটা খুসি তিনি বাজাবেন । সেই সুরের হিল্ললে বীণার অন্তর থরথর করে কেঁপে উঠবে । নিজেকে সে জানবে নিত্য নতুন করে। এ জানার শেষ নাই । গুণীরও যে গুণের শেষ নাই।
কিছুই চেয় না । শুধু নিঃসাড় হয়ে পড়ে থাক তাঁর কোলে। স্নেহাশিস।
This is the 41 st letter of patram pushpam
৪১
হৈমবতী
২৬।৫।৫৭।
...............। ........................ ..........................................।
ভাগবত আর গীতগোবিন্দ তো একই প্িলালীলার বর্ণনা । ভাগবতই গীতগোবিন্দের ভিত্তি । ভাগবতের বর্ণনা classic এবং ব্যাপারটা সেখানে cosmic ।গীতগোবিন্দে ওটা lyrical এবং individual । ভাগবতের মধ্য লীলায় যে ব্যাপ্তির ব্যঞ্জনা আছে, সেটি আয়ত্ত না হলে গীতগোবিন্দের রস ঠিকমত আস্বাদন করা যায় না। এর ভাষা প্রাকৃত কে সহজে ই দোলা দেয়। তাই তো বাঙ্গালী গীতগোবিন্দকে ভাগবতের চাইতেও বড় বলে দাবি করে। এই তুলনাগুলো আমি ঠিক বুঝতে পারি না। আমি নিজে যদি গোপী হই , তাহলে রাসচক্রেও যে আনন্দ পাব ,রজঃ কেলিতেও তাই পাব । বরং রাসের চেতনা উজ্জ্বল না থাকলে কেলিবিলাসের অনুভব পূর্ণ হবে না ।
স্নেহাসিশ নিও ।
This is the 40th letter of patram pushpam.
৪০
হৈমবতী
শিলং ,১০।৩।৫৭
................................................ ...................................................... .........।
আলো – আঁধারের দ্বন্দ্বে ভয় পেয় না । ওটা স্বাভাবিক। বহুদিন ঐরকম চলে । তারপর সব আঁধার নীল হয়ে যায় ,আর তার বুকে সাবিত্রী দীপ্তি জ্বলতে থাকে। Inertia -কেও তাঁর রূপ বলে গ্রহণ ক রো ।
আশা করি আনন্দে আছ। স্নেহাশিস নিও।
this is 39 th letter of patram pushpam
৩৯
৩৮
this is the 37 th letter of patram pushpam
৩৭ শিলং ২৩.১২.৫৬ 'সৌর কলঙ্ক' বলে একটা দীর্ঘ কবিতা লিখেছিলামI তার বীজটা ছিল অনেকদিন আগেকার -প্রায় একযুগ হবে I এখানে এসে সেটাকে রূপ দিয়েছিলাম I সূর্যের সবই আলো, তবুও তাপ বিকিরণ করতে গিয়ে তার মধ্যে sun - spot - এর সৃষ্টি হয় I সে কলঙ্কও আলো I বুদ্ধদেব এই সৌরকলঙ্কক়ে বলেছিলেন 'করুণা' I প্রজ্ঞা আর করুণা জড়িয়ে আছে দিব্যমিথুন হয়ে I পূর্ণ চেতনায় জগতের evil - এর ঐ রূপান্তর ঘটে নইলে তো কাজ চলে না I বেদের ঋষি বলেছেন , 'ভর্গ:' বা সবিতার scorching ray -র কথা, উপনিষদের ঋষি যাকে বলেছেন ' তপ:' I ওটাও evil -এর context - এ জাগে I ক্রিশ্চানরা suffering -এর কথা বলেন - christ -এর vicarious suffering and sacrifice I তুমি তিনটাকে পরপর সাজাতে পার --basic করুণা , তারপর energetic তপ: , তারপর God 'S self - immolation , his entering into the density of matter I যাঁরা আধিকারিক পুরুষ, অর্থাৎ যাঁদের জীবন বিশ্বের জন্য উত্সৃষ্ট - এই suffering theke তাঁদের মুক্তি নাই I এটাকেই 'she ' -তে বলেছিলাম তাঁর ransom of a tear I কিন্তু shield - এর রেভের্সে টাও নিশ্চয় আছে - যাকে তুমি বলছ অখণ্ড রসোল্লাস I আনন্দ বেদনা দুইই একসঙ্গে থাকে, না থাকলে পূর্ণতা আসবে কি করে ? যাঁরা আম খেয়ে মুখ মুছে ফেলেন, তাঁরা শুধু রসটাই পান করেন, ততই লীন হন , ওটা হল উত্তরের পথ এনং তার শেষ পরিণাম I Sufi - দের ভাবটা একটু অদ্ভুত I অনেক Sufi - ই ভগবানকে প্রিয়ারূপে উপাসনা করেছেন I বিশেষ করে persian sufi - রা I এভাবনার সংগে তন্ত্রের শিব- সতীর ভাবনারই তুলনা হতে পারে I পুরুষের প্রকৃতি - উপাসনা একমাত্র ভারতীয় আর্যধর্মেই আছে, আর কোথাও নাই I আমার মনে হয় , persian - দের সুপ্রাচীন আর্য- ভাবনা থেকেই এটা এসেছে, নইলে Islam - এ অধ্যাত্মজগতে তো প্রকৃতি - ভাবনার স্থান কোথাও নাই I Zoroaster ক়ে আমি শৈব মনে করি I তার ধারাটাই বোধ হয় persian sufi দের ভিতরে ঐভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে I Old persian ধর্মের tradition বলতে গেলে মুসলমানদের আক্রমনে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে I তাই প্রমাণপত্র পাওয়া একটু কঠিন I আশা করি , ভাল আছ I স্নেহাশিস I
this is the 36 th letter of patram pushpam
৩৬ ১৬.১২.৫৬ .................হৃদয়কে কেন্দ্র করে সেখান থেকে আলোর শক্তিকে ওপরে এবং নিচে বিচ্ছুরিত করবার অভ্যাস এখন করতে পার I চিত্তকে সব সময় হৃদয়ে রাখবার চেষ্টা করোI চৈত্য সত্তা সেখানেই আছে I একটি আলোর কমলের মত I তার আলোকে যদি মূলাধার পর্যন্ত বিচ্ছুরিত করে দাও, এবং সেই সংগে সংগে ঔপর দিকেও বিচ্ছুরিত কর, তাহলে নীচেকার অন্ধশক্তিটায় আগুন ধরে গিয়ে তা transformed হয়ে যাবে I সমস্ত ভাবনাটা এই ধরনের : relaxation দ্বারা একটা ব্যাপ্তির ভাব I একটা আকাশের পরিমণ্ডল তোমাকে ঘিরে, এই হনে তোমার চেতনার স্বচ্ছন্দ পটভূমিকা , সেই ভাস্বর আকাশে হৃদয়স্থিত ঐ আলোর কমল I তার রশ্মি মেরুদণ্ডের ভিতর দিয়ে আধার -কমলকে বিদ্ধ করছে এবং আজ্ঞাচক্রের ভিতর দিয়ে উর্ধ্বে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ছে যুগপৎI এমনি করে ভাবনা করে গেলে ক্রমে সব সহজ হয়ে যাবে I শ্বাসে -প্রশ্বাসে প্রণব জপ এই সময় খুব উপকারী হবেI নি:শ্বাসে আকর্ষণ, প্রশ্বাসে বিকর্ষণ I নি:শ্বাসে হৃত্পদ্ম উন্মীলিত হয়ে মূলাধার পর্যন্ত তার শক্তির রশ্মি চলে যাচ্ছেI আবার প্রশ্বাসে তা ভ্রুমধ্যের ওপারে মহাশূন্যে মিলে যাচ্ছে I ক্রিয়ার যৌগপদ্য বজায় থাকবে I শুধু প্রশ্বাসের সময় উপরের ভাবনাটা ঘনীভূত হবে - এই মাত্র বিশেষ I আশা করি , ভাল আছ I স্নেহাশিস I
Reply Forward
this is the 35 th letter of patram pushpam
৩৫ শিলং ৯.১২.৫৬ সাধনার গোড়ায় যখন সংস্কারগুলো ভাঙতে থাকে, তখন সমস্ত সত্তায় একটা তোলপাড় শুরু হয় I তাকে ভয় করো না I যাই হোক না কেন , তুমি আকাশে ছড়িয়ে পড় I এক বিপুল জ্যোতি:সত্তার সংগে একাকার হয়ে যাও I তুমিই শিব, তুমিই সতী - আবার তুমি এই বাঁকাচোরা জগৎটাই অর্থাৎ সত্তার তিনটা ভাগ - একটায় চলছে বিক্ষোভ, আর একটা শুদ্ধ সত্ত্ব ,ভালবাসার আলো, আরেকটায় এক অবিচল প্রশান্তি I ঐ আলো আর আনন্দই তো শিবসতী দুয়ে একাকার হয়ে আছে I যেমন এই শীতের প্রসন্ন নির্মল আকাশের বুক জুড়ে স্নিগ্ধ আলো এলিয়ে পড়েছে I বিক্ষোভের উপরে ঐ মধুর সামরস্যের আলো আনন্দ ঝরে পড়ছে, যেমন তোমার বাইরে , তেমন ভিতরে I ক্রমে সাধনা সহজ হয়ে আসবে I কোনও বিকল্প থাকবে না, শুধু একটা অবাধিত বোধI বোধ যতই সহজ হয়, ততই তা অবাধিত হয় I যেমন আকাশ, যেমন আলো , কেউ তাদের ঠেকাতে পারে না, কিছুতেই তাদের মাঝে তরঙ্গ তুলতে পারে না, তেমনি হও I স্নেহাশিস I
this is the 34 th letter of patram pushpam
৩৪ শিলং ২৫ .১১.৫৬ ................আজও সেদিনকার মত আলো -ঝলমলে সকালবেলায় তোমায় লিখছি I শীতের মিষ্টি রোদ পিঠের পর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিঝুম হয়ে আছে I মনে হোচ্ছে, সে যেন আজ মুগ্ধা বালিকার মত I সমস্ত পাওয়ার উর্ধ্বে একটি পরম পাওয়া আছে - সে এই শান্ত স্নিগ্ধ কবোষ্ণ শীতের রোদটির মত I একে তুমি পেয়েই আছ I আশ্চর্য এই , চেষ্টা করে একে পেতে হয় না I নিজেকে এলিয়ে দিলেই সে এসে তোমায় জড়িয়ে ধরে I তাঁকে নিয়ে মানুষ অনেক কল্পনাই করেছে - কিন্তু যেখানে পাওয়া আজকার মতই সহজ, তাকে আমি সবার উপরে ঠাঁই দিই I সতী তো সত্তার শান্তি I শিবের বুক জুড়ে আত্মারাম চেতনার যে অবাধ স্তব্ধতা, তারই উপরে হালকা জোছনার মত নিজেকে সে বিছিয়ে দিয়েছে I সে সৃষ্টি করছে না, প্রলয় ঘটাচ্ছে না -- সে শুধু আছে I শিবকে সে তপস্যা করে পায় নিI হঠাত তাঁর বুকে জেগে উঠে পেয়েছে - দেখছে যে চিরকালই তো সে এই বুকেই ছিলI তারা- ভরা আকাশের অনিমেষ দৃষ্টির নীচে পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে I আকাশ তার বিশাল বক্ষের স্তব্ধতা নামিয়ে দিয়েছে নি:শব্দ পৃথিবীর বুকে I এক-এক দিন গভীর রাতে এই দিব্যমিথুনকে দেখে চমকে উঠি - এই তো শিব -সতীর মিলনাদ্বৈতের সুষমা I এই মৌনী ভালবাসাই সবিতার দীপ্তি হয়ে ফুটবে সকালবেলায় I সবই তোমার চেতনায় রয়েছে, সুধাI চেতনাকে শুধুই অনন্তে ছড়িয়ে দাওI কৃষ্ণপক্ষের রাত গভীর হয়ে নেমে আসুক তোমার মাঝে I স্নেহাশিস I ঋষিদা I
this is the 33 rd letter of patram pushpam
৩৩ ২৮.১০.৫৬ দেহ প্রাণ আর মনকে চৈতন্যেরই বিভিন্ন প্রকার বলে দেখতে অভ্যাস করা উচিত I সবই বোধ মাত্র I মন স্বচ্ছ বোধ I প্রাণ শক্তিময় বোধ আর দেহ আধার - বোধ I সাংখ্য -এর ভাষায় সত্ত্ব ,রজ: আর তম: I মনের উপর যদি বিজ্ঞানের আলো এসে পড়ে , তাহলে তাই দিয়ে ও তিনটিকে ছন্দোময় করে নেওয়া যায় I বিজ্ঞানের লক্ষণ হোচ্ছে ব্যাপ্তি ও তটস্থতার বোধ I তুমি যেন আকাশ হয়ে ছড়িয়ে আছ I এই বোধের মাঝে দেহ প্রাণ মন ক্রিয়াশীল হোচ্ছে I যখন ঐ তিনটার কোনও বিকার উপস্থিত হয় , তখন ঐ ভূমার বোধে যদি আমরা চলে যেতে পারি , তাহলে বৈষম্য সহজে দূর হয়ে যায় I spinal cord - এ বাধা আছে , তাই কি, সব বাধাই হোচ্ছে গুরুত্বের inertia -বাধা I তাও দূর হয় ঐ ব্যাপ্তির বোধে I ভালমন্দ দুয়ের ওপারে চলে যাও I যখন যেমন তখন তেমন মন্দ অবস্থা এলে তাকে ভাল র সংগে তুলনা করতে যেও না I ভালোকেও আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করো না I তাহলে ভালমন্দের খেলাটা তাড়াতাড়ি মিটে যাবে I তখন থাকবে শুধু প্রসন্ন শিবত্বের বোধ I সেই বোধ হতে তারপর জাগবে মন্দকে ভালোতে transform করার শক্তি I মন্দ তখন তোমার আত্মশক্তির ইন্ধন হবে I কয়লা পুড়িয়ে তার আলো বের করবার সঙ্কেত পেয়ে যাবে I সব ঠিক হয়ে যাবে I আজ যাই I স্নেহাশিস নিও I
this is the 32nd letter of patram pushpam
৩২ ২১.১০.৫৬ বুদ্ধের প্রেম সম্পর্কে গত সপ্তাহের চিঠিতে তোমাকে লিখেছি I অন্তরে যত ডুবতে পারবে ততই বাইরকেও স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করতে পারবে I গাছের অঙ্কুর আলোর দিকে মাথা ঠেলে ওঠে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মাটির গভীরেও শিকড় চালিয়ে দেয় I এই হল প্রাণশক্তির কাজ I ভিতরে না ঢুকতে পারলে assimilation হয় না , সুতরাং growth - ও হয় না I যা- কিছুই আসুক না কেন , don 't re -act , but try to absorb it , Let it sink within you . সব তলিয়ে যাবে তোমার মাঝে I তুমি যেমন তেমনই থাকবে I স্নেহাশিস নিও I Reply Forward
this is the 31st letter of patrampushpam
৩১ শিলং ,বিজয়া ১৩৬৩ শূন্যতাকে ভয় করো না I কোন রসাস্বাদের আকাঙ্ক্ষা ভিতরে রেখো না I জীবনের পটের উপর নতুন করে ছবি আঁকা হবে, এ তারই আয়োজন I যা ছাড়তে আমরা ভয় পাই, বা দু:খ পাই , তা মিথ্যা I বৈরাগীর এই কথাটা spiritual psychology - র একটা মস্ত সত্য I ছাড়লেই পাওয়া যায় I বন্ধ ঘরের মায়া টুটলেই বৃহৎ আকাশ এসে আবিষ্ট করে I তখন প্রসন্নতা, তারপর আনন্দ, তারপর প্রেম I বৃন্দাবনের রসোল্লাস তখনি জাগে I দেখছ না, একটা অমাবস্যা পার হলে তবে রাস - পূর্নিমা I বুদ্ধের প্রেম ঐ আঁধারের প্রেম I পুরুষও সেখানে শূন্য,প্রকৃতিও শূন্য I শূন্যে শূন্যে নিবিড় সামরস্য I ঐ শূন্যের বুকেই যুগলের লীলা , উমা-মহেশ্বর , রাধা-কৃষ্ণ I তারও নীচে অপূর্ণ জগৎ - চলছে পূর্ণতার পানে I বুদ্ধের প্রেম সেখানে করুণা হয়ে ফুটছে I সহজিয়ারা বুদ্ধহৃদয়ের এই রহস্যকে বুঝেছিলেন বলে তাঁরা ভালোবেসেছিলেন নৈরাত্ম্য-দেবীকে , প্রজ্ঞা -পারমিতা তারাকে I বলেছিলেন, ও মেয়ে তো চাঁড়ালের মেয়ে, ডোমের মেয়ে ওকে ছোঁবে ক়ে? যে ছোয় সে কূলের বার হয়ে যায় I এই প্রেমে তরঙ্গ ওঠে না, পাওয়াও নাই, না-পাওয়াও নাই I বেদে একটু আভাস পাওয়া যায় I অদিতি আর বরুণের ভালবাসায় I দুই - ই শূন্য I আজ যাই I অনেক চিঠি লিখতে হবে I ভাল থেকো I শান্ত থেকো I
this is the 30 th letter of patram pushpam
৩০ ৭.১০.৫৬ তোমার মহালয়ার কার্ডখানা পেলাম I গত সপ্তাহ থেকে এখানে শরতের হাসি নিভে গেছে , আবার বর্ষাকালের মতবৃষ্টি শুরু হয়েছে I আজ সকাল থেকে চারিদিক আঁধার করে বৃষ্টি নেমেছে I হয়তো পূজা পর্যন্ত এইরকমই চলবে I অকালে আলো দেখে আমরা এইটাই আশঙ্কা করেছিলাম I বোধহয় সে আশঙ্কা সত্য হতে চলল I সারা বাংলাদেশ তো বন্যায় ডুবে গেল I আর কত মার খাবে ? দেশটা একেবারে বঙ্গোপসাগরের অতলে তলিয়ে যায় না কেন? শূন্যতাকে ভয় কোরো না I ওটা পূর্ণতার পটভূমিকা I যে কোনও শক্তির প্রকাশের আগে ঐ রকম একটা শূন্যতা আসে I ঝড়ের আগে থমথমে ভাবের মত, অঙ্কুর জাগবার আগে বীজের সুপ্তির মত I আমরা ধ্যানে মনকে ডুবিয়ে দিতেও চাই ঐ জন্যেই I সব অবস্থায় relaxtion হোচ্ছে সাধনার গূড় কৌশল I যা আসে তারই মাঝে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখ শুধু I উপরে উপরে ঢেউয়ের দোলা, কিন্তু দেখবে মন ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে সেই গভীরে যেখানে কোন তরঙ্গ নেই I ঐ নিশ্চল প্রশান্তিই আলো - আঁধারের দোলা হয়ে দুলছে হৃদ্য সমুদ্রের উপরে I এইটা বুঝতে পারাই হলে সাধনার সার্থকতা I আঁধার তখন আর আঁধার থাকে না - অলখ আলোর হাজার স্ফুলিঙ্গে ঝিকমিকিয়ে ওঠে I পরম শূন্যের মাঝেই কিশোরীর রূপ ফুটে উঠুক I শ্রীকৃষ্ণ হৃদয়ে শ্রীমতীর মত I স্নেহাশিস I
this is the 29 th letter of patram pushpam
২৯ ২৩.৯.৫৬ তোমার ছবিখানা এসেছে I খুব সুন্দর তো I মনে হচ্ছে এই তো আমার হৈমবতীর ভুবনেশ্বরী রূপ - জেগে আছে বাংলার শিয়রে I তাকে পড়ার ঘরের দরজার উপর টানিয়েছি, বুদ্ধমুর্তিকে face করে I সুর্যোদয়ের ছবিটা বাঁধাতে দেব,ঐ সংগে পুরীর সমুদ্রের একটা I এ দুখানা থাকবে আমার study তে I সুর্যোদয়ের ছবিটার নাম দিয়েছি 'সাবিত্রী' আর সমুদ্রের ছবিটা অদিতি I উত্তরাখন্ডের 'হৈমবতী' র ছবি আগেই ছিল I 'অদিতি' 'সাবিত্রী' 'হৈমবতী' 'ভুবনেশ্বরী' -ব্যস ভারতবর্ষের চারটি রূপ বাঁধা পড়ল ছবির ফ্রেমে I বেশ লাগছে ভাবতে I যীশুর প্রেমে এক অগম রহস্য I চৈতন্যদেবের মতই ভক্ত -ভগবান এক সঙ্গে I আমার অনুভবে আসে god walking on earth I জড় চিন্ময় হয়ে গেছে, তাই বস্তু শক্তির বিদ্যুন্ময় আবির্ভাব তার মাঝে I এইটি চৈতন্য মহাপ্রভুরও ছিল I একটা সাধারণ তার যদি বিদ্যুতে charged হয়ে থাকে , তাহলে কি হয়? যে ছোয় সে বিদ্যুন্ময় হয়ে যায় I ব্যাপারটা ঐ রকম I বাইরে এদের সবার ভক্তভাব, জিব্ভাব I jesus son of man এবং son of god , চৈতন্য রাধাভাবে আবৃত - চিত্যসত্তার পরিপূর্ণ স্ফূর্তি I কিন্তু পুরুষ যে বজ্রগর্ভ হয়ে আছে ঐ তনুতে, তাই পতিতা Mary -র প্রাণ উথলে উঠল I ঐ তো গোপীর ভালবাসা আত্মারামের প্রতি I বহু যুগ পরে bride of christ সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছিল তাঁকে নিয়ে , যেমন বাংলার 'নদীয়া নাগরী' র ভাব I বুদ্ধকে নিয়েও এই ব্যাপার I তবে বুদ্ধ এদের চাইতে একটু স্বতন্ত্র I jesus আর চৈতন্যের সাদৃশ্যটা খুব বেশী I বলতে পার palpable divinity - সাধনার আয়াসটুকু পর্যন্ত স্বীকার করেন নি I একেবারে দপ করে জ্বলে উঠেছেন I হৃদয়ে ধারণা কর , তুমিও জ্বলে উঠবে গো ! তাঁরা তো তোমাদের জন্যই এসেছিলেন I তোমাদের ভালবাসার অকূল পিপাসা মেটাতে I ওঠা-নামার জন্য ভেবো না, দেখে যাও I আগুন আজ ধুইয়ে- ধুইয়ে জ্বলছে, একদিন দপ করে জ্বলে উঠবে দেখো I ভাল থেকো I স্নেহাশিস I
this is the 28 th letter of patram pushpam
২৮ ২.৯.৫৬ '..................একটি মুহূর্ত তার আয়ু ' ইত্যাদিতে বলতে চেয়েছিলাম timeless eternity আর eternity in time এর সমন্বয়ের কথা I সৃষ্টিতে যে পরিণামের ধারা , তার শেষ মুহুর্তে আসে একটি চরম পূর্ণতা, আমাদের ধারাবাহিত চিত্ত তারই জন্য ব্যাকুল থাকে I এই ব্যাকুলতাই passage of time - এর বোধ সৃষ্টি করে I কিন্তু চরম মুহুর্তের পূর্ণতা তো বীজের আদিম মুহূর্তেও ছিল I সেই মুহূর্তকে আমরা পাই ভলোবাসার ধনকে যখন পরিপূর্ণ ভাবে হৃদয়ে পাই I সে পাওয়া এক মুহুর্তের পাওয়া - তাতে কালের continuity নাই, থাকলে পাওয়া পূর্ণ হত না I খন্ডিত হত I অথচ সেই পরম মুহূর্তটি ভরে আছে কাল পরিণামের ধারায় বাহিত সৃষ্টির সমস্ত ব্যঞ্জনাটুকু I সাধকেরা যাকে বলেন 'উলট যাও', সেটা হল ঐ রাধার অভিসার I ব্রজ থেকে কুঞ্জে যাওয়া I আর 'ধারা' বলতে তাঁরা বোঝেন সৃষ্ঠির মায়িক ধারা I আমি বলতে চাই, বস্তুত: রাধা থেকেই ধারা - প্রকৃতি - পুরুষের মিলনানন্দের উচ্ছলতাই সৃষ্টি I তা মায়া নয়, আনন্দ I অটল শিব সতীকে আকর্ষণ করেন I সতী তখন রাধা I কিন্তু সেই সতী যখন শিবের বুকে মুর্চ্ছিতা অর্থাৎ অটল , তখন আবার শিব টলেন I অটলের এই টলাই সৃষ্টি I সৃষ্টি শব্দের মৌলিক অর্থও তাই - উত্সারণ I কিন্তু এই উত্সারণে তিনি নি:শেষিত হন না I অর্থাৎ অটল থেকেই তিনি টলেন I যেন আত্মস্থ কবির কাব্য উত্সারণ I সেখানে কাব্যলক্ষ্মী কবির হৃদয়ে লীনা , সমাহিতা; সেই স্পর্শের আনন্দে কবির উচ্ছলন I অপ্রকাশিত একটি কবিতার শেষ স্তবকটি তুলে দিচ্ছি I শান্ত শিব সন্নত নয়ন অনিমেষ চেয়ে আছে বক্ষলিনা শিবানীর পানে I মুদিতনয়না সতী........ সূচীমুখ চেতনার মহাশূন্যে ভাসে তার স্বপ্নের বলাকা I উদাসী হরের আঁখি তবু নিষ্পলক, ........... প্রত্যেক দৃষ্টিতে শুধু দিব্য ভুবনের রণিছে ব্যাহৃতিমাত্র নি:স্বর গুঞ্জনে I তারপরেই সৃষ্টির কুল ভাঙা প্লাবন I আনন্দে থেকো I স্নেহাশিস I
this is 27 th letter of patram pushpam
২৭ ২৬.৮.৫৬ তোমার দুখানা চিঠিই ২০ তারিখে পেলাম I চিত্ত একাগ্র না করলে সঙ্গীতের রসবোধ হয় না I যে বাজায় বা গায় তার ও নিজেকে ভুলে যাওয়া চাই I এর মধ্যে একদিন পাঠ্মন্দিরে গিয়ে ছিলাম ......violin শুনতে I মেয়েটি এখানকার best artist I চার বছর আগে বাজনা শুনেছিলাম I এবার দেখলাম technique - এর দিক দিয়ে আরও উন্নতি করেছে , কিন্তু সেই পরিমাণে প্রাণ হারিয়েছে I আকাশের বুকে আলোর নূপুর বাজল না তো সুরে - মাঝে মাঝে চির খেয়ে খেয়ে ভেঙে যেতে লাগলো I ওস্তাদদের ওই হয় I অহং জেগে ওঠে, আর সরস্বতীর কমলবনে মত্তহস্তীর উতালতা শুরু হয় I ..... .............. .................. ..................... ................ ...................... পুরুষ উত্তমের প্রেমে উচ্ছ্বাস আছে বই কি ! কিন্তু সে উচ্ছ্বাস প্রশান্ত সমুদ্রের গভীরে বিবশা প্রকৃতির হৃদয়ের দুরুদুরুতে শুরু হয় তাঁর আনন্দ তান্ডব - সতীর হৃদ্য সমুদ্র দুলতে থাকে সেও তান্ডবে I কিন্তু তা কখনও কূল ছাপিয়ে যায় না I যতখানি উচ্ছ্বাস ,ততখানি গভীরতা I এর ছবি কোথাও নাই - এই সতীহারা শঙ্করের উদ্দামতায় তার কিছুটা আভাস আছে I সতীর দেহকে ভালবাসা, তার প্রাণহীন শবের স্পর্শে মহাকালের অন্তরে মৃত্যুর আনন্দ দোলা - ঐ একটিমাত্র ছবি I ওকে অপ্রাকৃত বিপরীত- বিহারের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে I সতী স্তব্ধ, শিব উন্মত্ত I কিন্ত সে- উন্মত্ততা মৃত্যু -শান্ত আকাশের গভীরে -সেখানে তো সতী অমৃতা I এই অদ্ভুত বিরহের এবং সেই সংগে সংগে অকূল মিলনের অনুভবের কথা কেউ মুখ ফুটে বলেন নি I কেন জানি না I অটলও যে টলেন , তার ওই একটি ছবি I যদি কেউ শিব - চিত্তের গভীরে তখন ডুবতে পারে, অন্তর নিমেষিতা সতীর সত্তার শিবের গভীরে আকূতিক়ে সে টলতে দেখবে পারার মত I ওখানে ভুবন নাই, কিন্তু ভুবনের বীজ আছে I মৃত্যুকে প্রলয় বলতে পার, সমাধি বলতে পার, পরিপূর্ণ মিলনের কায়াহীন রভস বলতে পার I সেই গভীরে ভুবনে পুরুষ উত্তমেরও হৃদয়-স্পন্দন শোনা যায় I সে স্পন্দনে সতীর হৃদয় নিথর হয়ে যায়-- শুধু নিমীলিত দুটি চোখের সন্ধি - বিন্দুতে জেগে ওঠে অনামা ভুবনের স্বপ্ন, অধরে ফোটে পরিপূর্ণ দেওয়ার আর পাওয়ার স্মিত জ্যোত্স্না I সতী নিস্পন্দ, কিন্তু শিব টলছেন , তাই একে বলি বিপরীত -বিহার , কেন না, অপ্রাকৃত জগতে পুরুষ উত্তমের প্রশান্ত বুকে প্রকৃতির বিহ্বল হয়ে ঢলে পড়াই স্বাভাবিক ছন্দ কিনা I অর্থাৎ এটাই 'রা -ধা'------ আর তার পরের যেটা ওটা 'ধা- রা' I যাই I আনন্দে থেকো I
this is the 26 th letter of patram pushpam
২৬ ১.৮. ৫৬ মহাব্রত - যাগে মেয়েরা গান গাইবে এবং নাচবে - এই কথাটুকুই শুধু ব্রাহ্মন গ্রন্থে পাওয়া যায় , আর কোনও details পাওয়া যায় না I সুতরাং এ সম্বন্ধে তোমায় কিছু বলতে পারলাম না I বৈদিক সঙ্গীত সম্বন্ধে স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের গবেষণা অত্যন্ত উপরভাসা , অন্তত আমি যতটুকু দেখেছি I journal of orientel arts - এ একবার এ সম্বন্ধে একটা লেখা দেখেছিলাম, তাতে সম্ভবত: তৈত্তিরীয় আরণ্যক থেকে kichu রহস্যোক্তির ব্যাখ্যা ছিল - সেটা খুবই আশ্চর্যজনক I দু:খের বিষয় , আমি তার যা notes রেখেছিলাম , সেটা হারিয়ে গেছে, কোন সংখ্যায় বেরিয়েছিল , তাও বলতে পারব না national library ঘেঁটে যদি বের করা যায় কিন্তু ক়ে করবে ? সঙ্গীতে nervous system - এর উপর আশ্চর্য ক্রিয়া হয় I বেসুরা শরীর -যন্ত্রটাকে সুরে আনবার অমনতর সুন্দর উপায় আর নাই I sense of music জাগানোটা আমাদের দেশে শিক্ষার অঙ্গ হওয়া উচিত I ঐ ওস্তাদী ব্যাকরণ -বিভীষিকা-কন্টকিত সঙ্গীত নয়, রবীন্দ্রসঙ্গীতের মত সুন্দর সঙ্গীত দিয়ে শিশু -চিত্তকে charm করবার ব্যবস্থা করলে জগৎ থেকে যুদ্ধটা উঠে যত একদিন I nervous tension - এর ফলেই তো আজ জগতের এই অবস্থা I ................ .................. .......................... ..................... ....................... পতঞ্জলি চিত্তকে পঞ্চভূমিক বলেছেন তিনটা ভূমি প্রাকৃত গুণময় , দুটা ভূমি অপ্রাকৃত I পাঁচ ভূমিতে পাঁচরকম ভালবাসা ফোটে I মূড় ভূমির ভালবাসা অন্ধ জৈব আকর্ষণ - যা সর্বজীব -সাধারণ I ক্ষিপ্তভূমির প্রেম রজগুণময় , তাতে চাঞ্চল্য আছে লালসা আছে , যার ছবি চারিদিকে ছড়ানো I বিক্ষিপ্ত ভূমির প্রেম সাত্ত্বিক I সেখানে প্রেম idealised -রবীন্দ্রনাথের মহুয়াতে তার অনেক নিদর্শন ছড়ানো I এই প্রেমই সুষ্ঠু সমাজ গড়তে পারে I তার পরের ভূমি হল একাগ্র এবং নিরুদ্ধ I এই একাগ্র ভূমির প্রেমই গোপীর প্রেম I এটা মনের ওপারে বিজ্ঞানভূমির কথা I কিশোরী চেতনায় এটিই খুব সহজেই আসে I তার উজানে আকাশের শূন্য নিস্পন্দ চেতনায় জাগে আত্মারামের ভালবাসা -চিত্তের নিরুদ্ধ ভূমিতে I এই হল পুরুষ উত্তমের প্রেম I সে প্রেম প্রসন্ন উদার স্নিগ্ধতায় জগতের পানে চেয়ে আছে, আর মহাপ্রকৃতি বিবশ হয়ে তার বুকে ঢলে পড়ছে I বৈষ্ণব পদাবলীতে প্রকৃতির প্রেমকে সুন্দর করে আঁকা হয়েছে ; কিন্তু ঐ পুরুষের প্রেমের ছবি কোথাও ফুটতে দেখিনি I আমার কতগুলি কবিতায় তাকে রূপ দিতে চেষ্টা করেছিলাম I কিশোরীর ভালবাসা জৈব আকর্ষণে জড়ের দিকে নেমে যাবার সময় ঐ অপ্সর- চেতনার সৃষ্টি হয় I এইখানকার ছবিটাই বৈষ্ণব কবি একটু বেশি ফলাও করে বর্ণনা করেছেন, যেটা আমি বৈষ্ণব কবিতার ত্রুটি করে বলে মনে করি I জৈব আকর্ষনটা হ'ল প্রকৃতির একটা কৌশল I বহু জীব সৃষ্টি করে তার থেকে বাছাই করে করে একদিন হয়ত সে চিরকিশোর আর চিরকিশোরীক়ে পেয়ে যাবে ঐ নাতুরাল selection এর তাগিদে, তাই কিশোরীকে নামিয়ে আনে নীচে I এটা তার সকরুণ sacrifice বলতে পার I কি করা ? matter থেকে spirit ক়ে evolved হতে হলে এই ভুলের মাশুল টুকু দিতে হবে যে ! আজ যাই I যদি আর কোনও জিজ্ঞাসা থাকে তো করো I ভাল থেকো I স্নেহাশিস I Reply Forward
this is the 25 th letter of patram pushpam
2৫ ৫.৮.৫৬ -------আইপোমিয়া এবার বড় আনন্দ দিচ্ছে I সেই যে april থেকে ফুটতে শুরু করেছিল, এখল সমানেই ফুটে চলেছে I ফুলের গাছগুলি বড় হয়ে এখন হৈমবতীকে বড় সুন্দর দেখায় I তুমি অনুভূতির কথা যা লিখেছ, তাতে বুঝতে পারছি কাজ ঠিক মতই হচ্ছে I ঐ নরম তুলোর মত অনুভবটির কথা খুব ভাল লাগল I অতি psychic এর অনূভূতি, যোগীরা যাকে কুণ্ডলিনী- শক্তি বলেন I ওর নানা রূপ আছে I তোমার বেলায় ওটিকে 'কিশোরী- চেতনা' নাম দিতে পারি I এক সময় আমি ওকে বলতাম চম্পাবতী I ওর আত্মন্মিলনের ছন্দটি বড় সুন্দর I ঠিক ফুল ফোটার মত I ওর মাধুরীতে সমস্ত সত্তাকে ও ঐ আইপোমিয়ার রেশম -চিক্কণ আভায় গলিয়ে দিতে পারে I একটু নীচে নামে এলে এই চেতনাই আবার অপ্সরা চেতনায় রূপান্তরিত হয় I নারী তখন মোহিনী হয় I কিন্তু মহাশূন্যের পানে ওকে যদি মেলে রাখা যায় , তাহলে নারী হয় গোপী I সঙ্গীতের বৈদিক আর লৌকিক ভেদ নিয়ে পন্ডিতদের আলোচনা বহিরঙ্গ আলোচনা মাত্র I বৈদিক সঙ্গীতের অর্থাৎ সাম -সঙ্গীতের মূল ভাবটা হছে পৌরুষের বা রাগের I মহাব্রতযাগে মেয়েদের গাইবার বিধান ছিল , তা সামগান নয় I আমার বিশ্বাস, তাতে রাগিনীর বিকাশ হত I ঐ ধারাই দেশী সঙ্গীতের ধারা I সঙ্গীতেও পুরুষ- প্রকৃতির সংমিশ্রণ হয়েছে I সঙ্গীতের মূল কথাটা হল স্বরের বিন্যাসে ভাবের জাগরণ I আমাদের সাধারণ কথাতে ও সুর আছে, তাই দিয়ে বাচ্যার্থ ছাপিয়ে সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনাকে প্রকাশ করি I যে সুরে দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ পায়, সে সুরে তো আদর -সোহাগ প্রকাশ পায় না I ভাব অনুভাবে (Expression ) অভিব্যক্ত হয়, অর্থাৎ সুর রূপ নেয় I যে গায় বা বাজায় প্রথম রূপ নেয় তার মাঝে I তারপর তা শ্রোতাতে সংক্রামিত হয় I দুয়ের যোগাযোগে সুর ভাবলোকে মূর্তিমান হয় I তখন তাকে প্রত্যক্ষ হতে দেখা যায় I আধুনিক ওস্তাদী গানে আমি দেখি শুধু নন কসরত ; অনুভাবের হতাশাজনক রূপে কম I সুর যদি আসরের আবহে মূর্তি না নিতে পারল , তাহলে সবই বৃথা I কীর্তনে তবুও অনুভাব কতকটা ফোটে, কিন্তু অন্যত্র বলতে গেলে কিছুই না I Artist এবং শ্রোতা দুই - ই সেসব জায়গায় বর্বর I রবীন্দ্রনাথের 'গাহিছে কাশীনাথ' কবিতাটি মনে করো I সেখানে আবহ সৃষ্টির ইঙ্গিত আছে I এই আবহ সৃষ্টি না করতে পারলে স্বর হতে রূপের সৃষ্টি হয় না I আজ যাই I স্নেহাশিস I
this is the 24 th letter of patram pushpam ২৪ ২৯.৭.৫৬ তোমার কার্ড খানা পেলাম I ' জপসূত্রম' এসেছে , ছবি দুটিও I সুন্দর ছবি I বড়টির প্রতীক্ষায় আছি I আমার জন্মদিন গুরুপূর্ণিমাতে নয়, কাছাকাছি I আমি জন্মদিন পালনের পক্ষপাতী নই I উষারা তা নিয়ে একটু মাতামাতি করতে চাইত বলে বলেছিলাম I কেন ঐ তো ব্যাসপুর্ণিমার পুণ্য তিথি সামনেই রয়েছে, ঐদিনই উত্সব কর না কেন ? ব্যাসচেতনাকে স্মরণ কর I মানুষকে নিয়ে হৈ চৈ কেন ? তাইতে বোধ হয় তিথি নিয়ে ঐ গোলমালের সৃষ্টি হয়েছে I নিশ্চিন্ত আরামের অবস্থা একটা এসেছে শুনে খুসী হলাম I যত relax করে থাকতে পারবে, ততই এ অবস্থা স্থায়ী হবে এবং গভীরে কাজ করবে ----- রাত্রের ঘুমে যেমন আমাদের ভিতরটা স্বচ্ছ এবং সঞ্জীবিত হয় , তেমনি I অন্তরে একটি আলোর কমল দল মেলেছে - এইটি শান্ত হয়ে সব সময় অনুভব করাই সহজ সিদ্ধি I সহজ বলেই ওটা কঠিন I কেননা আমাদের প্রাকৃত চিত্ত নি:শব্দে আলো ফোটায় আনন্দ পায় না I সে চায় একটা উত্তালতা I অতিস্বল্প আয়োজনে ভূমার আনন্দকে অনুভব করতে পারাটা জীবনের আর্ট I আশা করি , ভাল আছ, আনন্দে আছ I স্নেহাশিস নিও I
here the 23 rd letter of patram pushpam is added
২৩ ২২.৭.৫৬ .............................প্রাণের বেগে পথ চলে, তাইতে মাঝে মাঝে হোচট খায় I এমনি করেই চলার ছন্দ পেয়ে যাবে একদিন I তোমার শেষ রক্ষা কেন হবে না, নিশ্চয় হবে I শূন্যের মাঝে যেতে জড়ো কেন্দ্র গুলি প্রথমে ভয় পায় I ওটা আর কিছু নয়, অজানাকে ভয় I সব ভয়ই হল, 'আমি যদি পড়ে যাই , পায়ের তলায় মাটির support যদি না থাকে -- এই ভয় I এ ভয়টা শিশুরও থাকে I পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ হতে এটার উত্পত্তি I মহাশূন্য নিরাধার , তাই যারা আধার চায়, তারা তাকে ভয় পায় I কিন্তু ওই নিরাধার শুন্য ই অভয় I Eই শূন্যকে যদি স্থুলভাবেই তোমার বুকের মধ্যে অনুভব করতে পার, সমস্ত বুক দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে বুকটাকে প্রসারিত করে লয় করে দিতে পার, তাহলে মেরুতন্ত্রে বিদ্যুত খেলে যাবে এবং তারই বিস্ফারণে আকাশের মাঝে নিজের চৈতন্যদীপ্তিকে অনন্ত ব্যাপ্ত বলে অনুভব করতে পারবে I এই অনুভবই অমৃত I তখন আর কোন ভয় থাকে না I 'না'- এর বুকে হা যেন আনন্দে দুলতে থাকে I হৃদয় দিয়ে সাধনা মেয়েদের দেহ- বোধের অনুকূল I পুরুষের মাঝেও যারা নারী প্রকৃতির , তাদের বেলাতেও তাই ওতে strain কম হয় এবং দৈহ্যসত্তার গভীরে একটা সুগভীর নির্মল তৃপ্তিও জাগে I বাইরের জগত সম্বন্ধে খুব তীব্রভাবে কোনো ইচ্ছাই কোরো না I ইচ্ছা মাত্রেই হল শক্তির বিকিরণ I উষার আলোর মত সহজ হবে I সহজকে পুষ্ট হতে দিলে তারই মাঝে অকল্পনীয় প্রচন্ড শক্তির আবির্ভাব হতে পারে I কিন্তু সেটা ধীরে ধীরে হতে দিয়ে হয় I নইলে স্বভাবের ছন্দ নষ্ট হয় I আকস্মিক বিপর্যয়ে সব এলিয়ে যায় I বাইরের কাল দিয়ে পৃথিবীর রুপান্তরের বেগকে মাপতে যেও না, তাহলেই কিন্তু হতাশ হতে হবে I তুমিই পৃথিবী , তোমার হৃদয়ের কমলের মত দল মেলাই তার রূপান্তর I তুমিই পার্থিব শক্তির কেন্দ্র I উষার আলোর মত শক্তির নি:শব্দ বিচ্ছুরণ I তোমার হৃদয় হতে- এই হল রাত্রির তপস্যা I স্নেহাশিস নিও I ঋষিদা
২২
8 .7 .56
তোমার চিঠি পেলাম I শিলং বলে নয়, সব পাহাড়েরই ওই দোষ বা গুণ যাই বল না কেন I একটু তাপ পেলেইই একেবারে জ্বলে উঠতে চায় I আজকাল দিনগুলো যাচ্ছে বেশ রোদে- বৃষ্টিতে মেশামেশী I দোপাটির চারাগুলো সেদিন transplant করলাম I আশা করি ভালই হবে I অপরাজিতা হল না I এই climate - এ হবেও না I অথচ ওই ফুলটার উপর আমার খুবই টান I যাক, অপরাজিতার বদলে ipomea ফুটছে অজস্র I
একটা জ্বালা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলাম I ষাট বছর তো দাহে কেটে গেল I ভারতবর্ষের জন -প্রকৃতির অদলবদল কিছুই দেখতে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না I অবশ্য একটা জাতির উত্থানের দিক থেকে ষাট বছর কিছুই না I রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন, অজস্র দিয়ে গেলেন , কিন্তু আমরা ধারণা করতে পারলাম কই ? নাচতে গাইতে আর ন্যাকামি সাহিত্য করতেই শিখেছি I প্রাণের বীর্য এবং ঔদার্য এলো কই ?
ভাবী generation এর জন্য ভাবনা হয় I হঠাত একটা রবীন্দ্রনাথ দেখা দেওয়া আশ্চর্য নয় I কিন্তু জনমনের জাগরণ কি আর দুপুরুষে ও হবে? ভরসা করি না I তবে ভাবনাও করি না , ভাবি ষাট বছরের অনির্বাণ দহন, তার কি কোনও মূল্যই নাই , অপরাজিতা কি ফুটবে না ? নিশ্চয় ফুটবে I এই আশা আর ঈশ্বরে বিশ্বাস দুই-ই আমার কাছে এক বস্তু I
তুমি ভাল আছ জেনে খুসী হলাম I নীচে থেকে নাগিনী ফুঁসে উঠুক, ভ্রুক্ষেপ কোরো না I অচঞ্চল থাকায় হল শক্তি সাধনার প্রধান অঙ্গ I আর চাই চেতনার স্বচ্ছতা I বাইরের বা ভিতরে কিছুই যেন তার মাঝে ধোঁয়ার সৃষ্টি না করে I বাধা আসবেই অন্তত: কিছুদিন পর্যন্ত I কিন্তু তার জন্য চঞ্চল হোয় না, শুধু প্রশান্ত দৃষ্টিতে স্মিত হাস্যে দেখেই যাও I তোমার ঐ হাসিই পাগলের নাগিনীর বিষকে অমৃতে রুপান্তরিত করবে I
আনন্দে থেকো I আজ যাই I সন্ধ্যা মনো ভালই আছে I তাদের ভালবাসা নিও I
_____________________________________
২১
1 .7 .56 .
...................বর্ষা গিয়ে এখন এখানে কদিন ধরে শরতের আলো ঝলমল করছে, আবার একটানা শুকনা দিন চলছে I এটাও ভালো না, গাছপালা রস না পেয়ে নির্জীব হয়ে পড়ছে I বাজারে তরি- তরকারি দুর্লভ অতএব দুর্মুল্য হয়ে উঠছে I তবুও এই অজস্র আলোর উত্সারণ ভাল লাগে I
স্বামীজির কথা - কাছেও শুনলাম I দেখতেই তো পাচ্ছ , spectacular একটা কিছু না হলে মানুষের মন ভোলে না I উনি নীরবে কাজ ক'রে গেছেন সারাজীবন , হৈ চৈ করেন নি, তাই উনি কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলেন না I যদি কীর্তন করতেন, বক্তৃতা দিতেন, এখানে ওখানে ছুটোছুটি করতেন, তখন লোকের ভীড় হত I ব্যবস্থারও অভাব হত না I কিন্তু এ নিয়ে দু:খ করে লাভ নাই I
"many- too- many - the superfluous "- দের মনোরঞ্জন করাটাই একমাত্র কাজ নয় I নীরব তপস্যার, আত্মনিমগ্ন শক্তিবিকিরণের একটা মূল্য আছে I মনে হয় , সেইটাই বড় I লোকে যা জানতে পেয়ে যাবে I আকাশে সূর্য জ্বলছে I কিন্তু ক়ে তার দিকে চেয়ে দেখে ?তার জন্য সূর্যের দাক্ষিন্যে তো কৃপণতা নাই I
যতটা পার ফাঁকে থেকো I সব কিছুর ভিতর দিয়ে সহজে যেন বয়ে যেতে পার অনিরুদ্ধ প্রাণের স্রোত হয়ে, এই দিকে নজর রেখো I কোনও কিছুর প্রত্যাশা করো না I যা হবার হোক, তুমি শুধু সহজের স্রোতে ভেসে চল I মাথার উপর সূর্য জ্বলছে I তার আলোর কাছে হৃদয়টি মেলে দাও, চিরকিশোরীর নির্মল আত্মনিবেদনের আনন্দঝঙ্কার দিয়ে উঠুক তোমার শিরায় শিরায়, সবিতার পানে চেয়ে I আনন্দে থেকো I স্নেহাশিস I
______________________________
২০
24 . 6 . 56
ফাঁকা ভাবটাই ধরে থেকো, হিজি বিজি গুলোকে control করতে যেও না, তাতে ওরা আরও বেসামাল হয়ে পড়বে I ফাঁকার মাঝে নিজেকে ছেড়ে দিলে তারই ভূমিকায় সব কিছু আপনা থেকে গুছিয়ে আসবে I একেবারে সব ভুলে থেকো - যখন -তখন I জীবনের কোনও লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য যে আছে, তাও ভুলে যেও I শুধু অস্তিত্বের একটা প্রশান্তি নিয়ে চুপ করে থেকো, তাহলে তাঁর লক্ষ্যটা তোমার মাঝে ভেসে উঠবে I
ভাল থেকো I স্নেহাশিস I
19th Lettter
১৯
৮.৪.৫৬.
...................ওঠানামা চলছে চলুক I তার জন্য ভয় পেও না I ব্যাপারটাকে আঁধার তরল ক'রে আলোর ফোটার সংগে তুলনা করা যেতে পারে I আলো ফুটছে, ফুল ফুটছে, এই নি:শব্দে নিরন্তর ফোটাটাই আধ্যাত্মিকতা I লড়াই আছে, থাকবে I কিন্তু সেটাই বড় নয় I লড়াইটা যে একটা অবিক্ষুব্দ্ধ প্রশান্তির বুকে ঘটছে এইটাই সবচেয়ে বড় কথা I তিনি সেই প্রশান্তি ও আকাশ হয়ে তোমায় ঘিরে আছেন , ধরে আছেন, ভরে আছে, এই অনুভবে উজ্জীবিত থেকো I স্নেহাশিস I
18th Letter
১৮
১.৪.৫৬
তোমার চিঠি পেলাম I আমার রবিবারে চিঠি লেখার নিয়ম I তোমার গত চিঠিটা বোধ হয় সোমবারে পেয়েছিলাম, তাইতে উত্তর দিতে দেরী হয়েছে I জপসূত্রম - এর লেখাটা পাঠিয়েছি I
.................. ...................... ..................... ......................................
ফাঁকা হওয়াই আসল কথা I লোকে বলে , আকাশ -কুসুম মিথ্যা, কিন্তু আলোর ফুল তো আকাশেই ফোটে I ওর চাইতে সত্য আর কি আছে ? তোমার হৃদয়ের আকাশে আলোর ফুল ফুটুক I তার সৌরভে নিজেই মাতোয়ারা হয়ে যাও - এই আশীর্বাদ করছি I আজ যাই I ভালো থেকো I
17th Letter
১৭ 23 .3 .56
জপসূত্রম -এর সেই লেখাটা হয়ে গেছে I ..............
একটা খুব বৃহৎ অবকাশের মাঝে নিজেকে ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা কর I কাজকর্মের ফাঁকে- ফাঁকে আমি সেই জন্য আকাশ ভাবনার কাথা বলি I সকল দুপুর সন্ধ্যা আর মধ্য রাত্রি এই চারটি সময় আমদের দেশে সাধনার উপযুক্ত কাল বলে ধরে নেওয়া হয়েছে I লক্ষ্য করো, প্রত্যেকটা সময় একটা স্তব্দ্ধতার ভাব আসে প্রকৃতির মাঝে I আকাশ যেন তার উদার বুক দিয়ে পৃথিবীকে জড়িয়ে ধরেন I আর জীবধাত্রী সব ভুলে তাঁর মাঝে তলিয়ে যান I শিবশক্তির এই পরম সামরস্যের ভাবটি ধারণা করাই সন্ধ্যা - কিনা চেতনার পর্বসন্ধি I পৃথিবীর বৈপুল্যের মাঝে বরাবর ছড়িয়ে দিও I তোমার সব nervous tension দূর হয়ে যাবে I ওই tension এই তো কষ্ট পাচ্ছI আধারটি পুরোপুরি স্বচ্ছ হয়ে উঠতে পারছে না I
এলিয়ে দেওয়া ভাবের মাঝেও নিজেকে জ্বালিয়ে রাখতে হয় I এটা আইন I নইলে দু:খে অবসন্ন আর সুখে এলিয়ে যাওয়াতে তো কোনও তফাৎ থাকে না I দুটোই তো পর্যবসিত হয় তামসিকতায় I নিজেকে জাগিয়ে রাখা আর চেতনার ব্যাপ্তিকে সব অনুভবের পরে পটভূমিকা করে রাখা - এই হল সব সাধনার মূল সূত্র I
ভালো থেকো , আনন্দে থেকো I যাই I
16th Lettr
১৬
22 .1 . 56
আঘাত না করলে তমোভাব দূর হয় না I এইটি অগ্নি বা উর্ধ্বমুখী অভীপ্সার কাজ I চিত্তটিকে উঁচু সুরে বেঁধে নিত্য জেগে থাকতে হবে I যার অভীপ্সা জেগেছে সে সাগ্নিক I তার গোত্রান্তর হয়েছে I সে তো আর পুরানো সংসারে ফিরে যেতে পারে না I
বিক্ষেপ দূর হয় উপরের প্রসাদে I যেমন আগুনের শিখা উজিয়ে চলেছে, তেমনি সোমের ধারা নেমে আসছে I তার প্রসাদ যেন আকাশ--ছাপানো ঝলমল আলোর জোয়ার I আমার হৃদয়ে তাই হল আনন্দ I এই আনন্দ চিত্তের সুর জাগায়, সামের ছন্দে জীবন সুষম হয় I
যেমন আমার বুকের আগুন বলিষ্ঠ সংকল্পে উত্শিখ হয়ে উঠেছে ,তেমনি আমার অন্তরের গভীরকে শিথিল করে দিয়ে তাঁর প্রসন্ন আনন্দের ধারা আমার বুকে নেমে আসছে I আমি একই মুহুর্তে উদ্দীপ্ত, আবার বিগলিত, উদ্যত, আবার এলায়িত I তুমি নার্রী , হৃদয়ে এই যুগ্মভাবের অনুভব তো তোমার কাছে কঠিন নয় I
অগ্নিসোমের এই সামরস্যই তোমার আড়াল ভাঙে, রোজের চাঞ্চল্যকে ছন্দময় করে I
ডাক্তার তাঁর কাজ করুন I তুমি অন্তরে এই অগ্নিসোমের দিব্য ভাবনা করে চল I বাইরের চিকিত্সাক়ে তা সাহায্য করবে I
ভালো থেকো I আনন্দে থেকো I স্নেহাশিস I
15th Letter
১৫ ranchi
8 .1 .56
....................তমিস্রার দুটি দুয়ার চেতনার দুটি পর্বসন্ধি I সাধন রাজ্যের কথা বেদ বা উপনিষদ বলেন মরমীয়া কবির ভাষায় , আর সাংখ্য বলেন বিজ্ঞানী দার্শনিকের ভাষায় I সুতরাং সাংখ্যের পরিভাষা ব্যবহার করলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে I চেতনার ক্ষেত্রে দুটি বৈকল্য দেখা দেয় - একটি তমোভাবের আর একটি রজোভাবের I তমোভাব চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে, আলো ফুটি ফুটি করেও ফুটতে পারে না I অগ্নির উর্ধ্বমুখী তেজ এই বাধাটিকে বিদীর্ণ করে I এইটিই একটি দুয়ার অপাবৃত করা I উপনিষদে এটিকে জাগ্রত থেকে স্বপ্নরাজ্যে যাওয়া বলে বর্ণনা করা হয়েছে I বলা বাহুল্য , এ স্বপ্ন বিজ্ঞানভূমির, আমরা আজকাল যাকে বলি ভাবলোক I এখানে বহুদিন একটা বিক্ষেপের কাজ চলে - তাই রজগুনের ক্রিয়া I
আলোর আভাসে আকাশ লাল হয়ে উঠেছে, আলো আঁধারের দ্বন্দ্ব চলছে I এই ভূমিতে বিজ্ঞানের সত্যের সঙ্গে মনের সত্যের সংমিশ্রন চলে -- আলো বারবার আসে , আবার ফিরে যায় I একটা প্রশান্ত স্থির জ্যোতি ফুটে উঠতে চেয়েও পারে না I আমরা যেমন প্রাকৃত ভূমিতে হিজিবিজি স্বপ্ন দেখি , অধ্যাত্মভূমির এই অন্তরিক্ষলোকেও বহুদিন তেমনি একটা চাঞ্চল্য চলে I পাঁচ মিশেলী দর্শন অনুভব ইত্যাদির একটা জটলা হতে থাকে I সত্যকার বোধের রাজ্য এই জটলার ওপারে I সেখানে যে আছে, তা প্রাতিভজ্ঞান I চোখ মেলে একটা গাছ দেখবার মত করে সত্যকে দেখা সেখানে I এই সত্যলোকের দুয়ার খুলে দেন ঊষা , তিনি প্রাতিভসংবিতের দেবী I তখন ওপারের আকাশ হয় রজস্তমোলেশশূন্য I আজ যাই I আনন্দে থেকো I
14th Letter
১৪ RANCHI 25 .12 .55
.........................এখানে জনসমাগম হচ্ছে ............ তবে শৃঙ্খলিত ভাবে I তাইতে একান্তে থাকবার সুযোগ পাচ্ছে I প্রায় সাত বছর পরে ছুটি পেলাম একটু I কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছি I শুধু অস্তিত্বের আনন্দ I তা থেকে যে তাপের বিকিরণ হয়, তার শক্তি কম নয় I মনে হয়, এটাই বেশি শক্তিশালী I কদিন ধরে আকাশ প্রায়ই নির্মেঘ থাকছে I কী যে ভালো লাগছে I
মনের মানুষ পাওয়া বড় কঠিন I আমি যাকে চাইছি, হয়ত একদিন সে বাংলার বুকে আবির্ভূত হবে, নইলে আজ অর্ধশতাব্দী ধরে অজপার ছন্দে আমার এ চাওয়া কেন ? কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের জীবন ছন্দহীন, সভ্যতার বিকারে ছন্দহীনতা আরও বেড়েছে I এর মাঝে গায়ত্রীর আবির্ভাব সুকঠিন I আমার দিন ফুরিয়ে আসছে , আমি আর দেখে যেতে পারব না I কিন্তু সে আসবে তা জানি I তোমাদের হৃদয়ে সেই আগমনীর আলোই তো পড়ছে I
সমাজ চেতনার উপর এ কী নিবিড় আবরণ পড়ে আছে, তা কি করে বোঝাব I একেক সময় দেখে থমকে যেতে হয় I মূড়তার আবরণ একটু তরল হলো তো দেখা দিল অহমিকার বঞ্চনা I এইটাই মনে হচ্ছে সব চাইতে বড়ো বাধা I অথচ আত্মচেতনা জাগবে ওই অহংকারকে আশ্রয় করেই I মনে হয়, কুয়াশার যুগ বুঝি আর কাটবে না I
তবু ও মাথার উপর রয়েছে নীলাকাশ,পুষার দীপ্তি তাতে ঝলমল করছে I আলো ঝরে পড়ছে ,আঁধারকে পরাভব মানতেই হবে I
আমার লেখা থেকে কোথাও যদি কিছু দিতে চাও তো দিও I আমার কোনও আপত্তি নাই I
তোমাদের হৃদয় হ'ক যোগিনীর হৃদয় I আজ সকাল থেকে এই কথাটাই বারবার মনে উঠছে I
ভালো থেকো I আনন্দে থেকো I স্নেহাশিস নিও I
13th Letter
১৩ হৈমবতী
শিলং
১৩.১১.৫৫
একটা নতুন ভবিষ্যতের সূচনা নিয়ে যে শক্তি পৃথিবীতে নামছে , তার ক্রিয়া হবেই I এবং হবে প্রত্যেক দেশে , প্রত্যেক জাতির ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে - বিচিত্র ভাবে I বৈচিত্র্য থাকবে অথচ মূল সুর তো সেই একই I এইটিই ভারতবর্ষের মর্মকথা I এখানে অধ্যাত্মতত্ত্বকে মানুষ কত বিচিত্র ভাবে পেয়েছে যে বলবার নয় I অথচ বেদে বেদান্তে পুরাণে তন্ত্রে যোগে এই যে বিচিত্র সাধনা , এ সবই চলেছে একটা মহাসমন্বয়ের দিকে I এই বিপুল ধারার সঙ্গে যুক্ত হবে পৃথিবীর নানা দেশের অধ্যাত্মসাধনার নানা ধারা I সব মিলিয়ে জাগবে এক মহাওঙ্কারধ্বনি I নেপথ্যে তার আয়োজন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি I আশা সেইখানে বর্তমানের কোলাহলকে তাই খেয়ালের মধ্যে আনি না I
আনন্দে থেকো I ভালো থেকো I স্নেহাশিস I
12th Letter
১২
হৈমবতী, শিলং
৯,১০.৫৫
...................শরীরটা ভালো যাচ্ছে না শুনে দু:খ হয় I কি অসুখ ? চিকিত্সা করাচ্ছ তো ? সঙ্গে সঙ্গে মনটাকেও নির্ভাবনায় এবং হালকা রাখবার চেষ্টা করো I আকাশভাবনায় শরীরের উপর TONIC - এর কাজ করে I
দেখতেই পাচ্ছ, বাঙালী একটা মিশ্র জাতি, সম জাতিই তাই I রক্তের দিক কিয়ে যেমন মিশ্র , তেমনি সংস্কৃতির দিক দিয়েও I রক্তের মাঝে থাকে মায়ের প্রভাব, হৃদয়ের আর মাটির প্রভাব , সংস্কৃতির মাঝে থাকে বাপের প্রভাব, বুদ্ধির প্রভাব, মাটি সেখানে মুক্তি পায় আকাশে I ভৌগোলিক বাংলা দেশটা অনেক অর্বাচীন I বেদ উপনিষদের যুগে আর্যদের বিচ্ছিন্ন উপনিবেশ এখানে থাকা অসম্ভব নয় I কিন্তু গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর যে অনেক দূর I তাই সে যুগের বাঙালী আর্য চিন্তার দিক দিয়ে অনেক খানি মুক্তি পেয়েছিল I এই মুক্তিই তার বুদ্ধিকে শাণিত করেছে I পুরাণ যদি মান তাহলে বলতে হয়, বাংলার জলাভূমি কপিলের তপোভূমি I সগরবংশ ধ্বংস হওয়াটা ম্যালেরিয়ার চাপে একটা উপনিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া বলে মনে হয় I কপিলের সাংখ্যই যত অবৈদিক আর্যদর্শনের প্রসূতি I তাই বেদান্তে আর সাংখ্যে এত বিরোধ ; আবার ভিতরে ভিতরে ভাবও আছে I
বেদান্ত আর সাংখ্যের সমন্বয় হচ্ছে তন্ত্রে I তন্ত্র বৈদিক ধর্মের লোকায়ত বা popular form I অভিজাতরা সবসময় একটু অনুদার থাকে, কিন্তু গণধর্ম সবাইকে মানে I তাই দর্শনের দিক দিয়ে সাংখ্য- বেদান্তে যে- বিরোধটা আমরা বেদান্ত - সূত্রে দেখতে পাই, তন্ত্র সেটা আশ্চর্য ভবে মিটিয়ে দিয়েছে --শক্তি আর শক্তিমানের বিরোধকে পরিণত করেছে ভালবাসায় I তন্ত্র সবাইকে আপন করেছে, স্ত্রী শূদ্র দ্বিজ -বন্ধুরা ব্রাহ্মণ্য ধর্মে অবজ্ঞাত , কিন্তু তন্ত্রে নয় I ভারতবর্ষের অধ্যাত্ম- ভাবনা আর সাধনার সমন্বয় এবং বিস্তার দুইই হয়েছে তন্ত্রে I তন্ত্রই জীবন্ত এবং জাগ্রত ধর্ম এদেশে I তন্ত্রে জীবনবোধ অত্যন্ত প্রবল I রামকৃষ্ণ তান্ত্রিক, তাই অধ্যাত্মসাধনায় তিনি বাস্তববাদী I বিবেকানন্দ তান্ত্রিক হবার সুযোগ পাননি ,তার আগেই তাঁকে চলে যেতে হল I কিন্তু তাঁর স্থান এসে পূরণ শ্রীঅরবিন্দ I একবার খালি তিনি বলেছিলেন, I am a Tantrik pure simple ................কিন্তু এই উক্তিটিকে আমি খুবই গুরুত্ব দিই I কাশ্মীর শৈবদর্শনে একটা কথা আছে 'মহামাহেশ্বর' I শ্রীঅরবিন্দকে ঠিক তাই বলা চলে I কেবল ভারত ধর্মের একটা দিক তাঁর মধ্যে তেমন পরিস্ফুট হয়নি - ক্রিয়া (ritual ) আর মন্ত্রের দিক I জ্ঞান আর যোগের দিকটা খুবই ফুটেছে - অর্থাৎ পুরুষের দিকটা I প্রকৃতির দিকটা আমার মনে হয় Mother-এর উপর বরাত দেওয়া আছে I জ্ঞান আর যোগ হলো বস্তুর সাধনা I জ্ঞানের practical দিক যেমন যোগ , মন্ত্রের তেমনি ক্রিয়াI এই চারটি নিয়ে ভারতধর্ম I আজ এই পর্যন্ত I যাই I স্নেহাশিস I
____________________________________
১১
হৈমবতী
শিলং ১৮.৯.৫৫
......................বৌদ্ধ ধর্ম আর জৈনধর্ম আর্যসংস্কৃতিরই অন্তর্গত কিন্তু পড়েছে বৈদিক বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বাইরে I তাহলেও উভয়ের মাঝে মতের আদান-প্রদান হয়েছে প্রচুর I প্রমাণ শঙ্করাচার্য I তিনি প্রচারক ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির, কিন্তু তাঁর দর্শনে বৌদ্ধ প্রভাব অনস্বীকার্য I সেই thesis , antithesis আর synthesis এর ব্যাপার I ভারতবর্ষের অধ্যাত্মসাধনা সব ক্ষেত্রে একটা dialectical movement অবলম্বন করে চলেছে I
বুদ্ধিবাদী আর দেববাদী ,আত্মবাদী আর ব্রহ্মবাদী ,মুনি আর ঋষি , সাংখ্য আর বেদান্ত , তর্ক আর মীমাংসা - এইগুলো হলো আর্যসংস্কৃতির যুগ্মধারার পরিচায়ক , আমি যাদের rationalist আর intuitionist বলতে চাই I নেপালে এদের একটা লৌকিক সংজ্ঞা হচ্ছে 'গু-ভাজু' আর 'দে ভাজু ' অর্থাৎ যারা গুরুকে ভজনা করে আর যারা দেবতাকে ভজনা করে I এখন উপরের সংজ্ঞা গুলির সঙ্গে মিলিয়ে যাও I ekTa ধারা মানুষকে , আত্মশক্তিকে, বিচারকে ,জ্ঞানকে প্রধান করেছে I আরেকটা ধারা দেবতাকে, দেবশক্তিকে, বিশ্বাসকে , ভক্তিকে বড় করেছে I অবশ্য অন্যান্য সংমিশ্রনও হয়েছে I বর্তমান হিন্দু ধর্মে দেখি সব - কিছুর সমন্বয় I
বাউলরা মানুষকে বড় করেছেন I 'সবার উপরে মানুষ সত্য' - যে অর্থেই হ'ক , বাউলের কথা I কথাটা মহাভারতেও আছে I 'মানুষাত পরতং নহি I' দেখতেই পাচ্ছ, বাউলরা সেই সুপ্রাচীন অবৈদিক আর্য সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী I লক্ষ্য করবার বিষয় , ব্রাহ্মণ্যধর্মের কেন্দ্র হল প্রাচীন মধ্যদেশ ----ধর দিল্লীর কাছাকাছি I এ -ধর্ম অভিযান চালিয়েছে পূবে আর দক্ষিনে I পূবে তাকে বাড়তে হয়েছে আর্যসংস্কৃতির সঙ্গে I বৌদ্ধধর্ম , জৈনধর্ম দুয়েরই উদ্ভব পূবদেশে I বাঙালী আগে জৈন ছিল , বৌদ্ধ ছিল -'বেদবিধির পারে ' কথাটা এখনও অক্লেশে তার মুখে উচ্চারিত হয় ই উপনিবিষ্ট ব্রাহ্মণদের দ্বারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রচার হয় তাদের মধ্যে I প্রাচীন সংস্কৃতি তার তলে চাপা পড়ে গেল I তাই আত্মপ্রকাশ করেছে বাউলের মধ্যে I তারা দেবতা মানে না, গুরু মানে I বলে মনের মানুষের কথা I তারা 'পুন্থ্যা' নয়, ' তথ্যা'---- পুঁথির ধার ধারে না মনে কেবল তথ্যক়ে বা সত্যকে I সূফীরাও বলে শরীয়তের চাইতে হকিকত বড় I শাস্ত্রের চাইতে সত্য বড় I বাউলদের মধ্যে বৌদ্ধ প্রভাব এবং সূফী প্রভাব দুইই আছে I বিপ্লবী বাঙালী হিন্দু হ'ক বা মুসলমান হ'ক , এই ভাবে বাউলের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে I একদিকে বাউল যেমন সমাজের নীচের স্তরে, তেমনি বাউল একেবারে শীর্ষে I
রামকৃষ্ণ , রবীন্দ্রনাথ নিজেদের বাউল বলতেন---- বাঁধন পরতেন না বলে I মধ্যযুগের সন্তদের মধ্যে মধ্যে বলতে গেলে সবাই বাউল I প্রাচীন জৈন্যদের মাঝেও তাদের খুঁজে পাবে I পাবে আরও প্রাচীন অথর্ববেদের ব্রাত্যদের মাঝে I আমি এটাকে বলি গণধর্ম I এই ধর্মই একদিন মানুষের মনকে সব বন্ধন হতে মুক্তি দিয়ে এক নুতুন বিশ্বধর্মের পত্তন করবে বলে বিশ্বাস করি I আজ যাই I স্নেহাশিস নিও I
_______________________________________
১০
হৈমবতী
shillong 28 .8 .55
..................আশা করি স্বামীজি এতদিনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন I আমার দিনগুলো হু -হু করে কাটছে I নীচে নামবার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, কাজের চাপও ততই বাড়ছে I এখানে এখন থেকেই শরতের আভাস পাচ্ছি I আজকার দিনটি চমত্কার I দ্যুলোকের পাত্র উপচে আলোকের প্লাবন বয়ে চলেছে I
আচ্ছা 'অসমাপিকা' বলে একটা কবিতা তোমায় একবার পাঠিয়েছিলাম I তারই জোড়া কবিতাটি এই সঙ্গে পাঠালাম 'সমাপিকা ' I
এইবার আমাদের আলোচনার আসরে নামা যাক I
সমাজের একটা দিক স্থানু আরেকটা দিক চরিষ্ণু হয় I আভিজাত্য সমাজে একটা কায়েমী স্থান দখল করতে চায় I কিন্তু গণচেতনা বয়ে চলে মুক্তধারায় I সমাজ বিজ্ঞানের এই দুটি মূলসূত্র যদি মনে রাখ, তাহলে বুঝতে পারবে, ব্রাহ্মণ্যধর্মে বা বৈদিক ধর্মে আমরা পাই আর্যসংস্কৃতির স্থানুত্বের এবং আভিজাত্যের পরিচয় I ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয়ের়া বিশেষ করে বৈদিক ধর্মের ( আমরা সংহিতা - ব্রাহ্মণাদিতে তার যে রূপ দেখতে পাই ) ধারক ও পোষক ছিলেন I ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয়ের বাইরে আর্য সমাজে নিশ্চয় ছিল বৈশ্য এবং শূদ্র I বৈশ্যেরা আর্য জনসাধারণ বা গণ I শূদ্রেরা বাইরে থেকে এই গণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন I ব্রাহ্মণেরা আচারানুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে বৈদিক ধর্মের একটা স্থায়ী কাঠামো গড়ে তুলেছেন , আবার ক্ষত্রিয়েরা তাকে সমর্থন করেও এই ধর্মের এবং আর্যসংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়েছেন I ব্রাহ্মণদের মাঝেও অনেক মুক্তচিত্ত মনীষী বৈদিকধর্মের স্থানুত্ব ভেঙে তাকে চরিষ্ণু করবার চেষ্টা করেছেন I এই ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয় সংস্কারক, আর্য বৈশ্য এবং আর্য ও আর্যেতর শূদ্রের়া মিলে বৈদিক শাসনের বাইরে যে বিরাট গণধর্মের ও গণসংস্কৃতির সূত্রপাত করেছিলেন , তাকেই অবৈদিক আর্যসংস্কৃতি বলছি I এই সংস্কৃতির দর্শন হলো সাংখ্যবাদ (analytic school ), বৌদ্ধবাদ (rational school ), জৈনবাদ (school of self -conquest ) I খুব প্রাচীন দুটি সংজ্ঞা ব্যবহার করে বলতে পারি, বৈদিক ধর্মের আশ্রয় ঋষি এবং অবৈদিক ধর্মের আশ্রয় মুনি I আগের শাখা মুখ্যত ব্রহ্মবাদী এবং দেববাদী, পরের শাখা মুখ্যত আত্মবাদী I একটা intuitionist school আরেকটা rationalist school I একের সাধনা ক্রিয়া অনুষ্ঠান ইত্যাদি, অপরের সাধনা যোগ I কিন্তু এই ভাগভাগিটা water - tight মনে করা ঠিক হবে না I মানুষের সমাজ সজীব , সুতরাং আদান-প্রদান ,অন্যোন্য -প্রভাব সর্বত্রই চলে I বিশেষত আর্যচিত্ত অত্যন্ত গ্রহিষ্ণু বলে সবসময় সে বিভিন্ন ধারার সমন্বয় করবার চেষ্টা করেছে I
সংস্কৃতির এই ছকটার সঙ্গে বঙ্গ সংস্কৃতির তুলনা কর I তাহলেই হয় তো আমার কথা বুঝতে পারবে I বাংলার সংস্কৃতির প্রবর্তক হলেন উপনিবিষ্ট আর্যেরা I ব্রাহ্মন-ক্ষত্রিয়- বৈশ্য তিন শ্রেনীর আর্যই উপনিবিষ্ট হয়েছেন I বৈশ্যেরা কৃষি বানিজ্য ইত্যাদি উপলক্ষ্যে আর্যেতর জাতির সঙ্গে খুব মেলামেশা করেছেন I ব্রাহ্মন-ক্ষত্রিয়ের আভিজাত্য নিয়ে একটু আলাদা থেকেছেন I আবার এঁদের মাঝেই প্রাচীন কালে বৌদ্ধ এবং জৈন আচার্যেরা আবির্ভূত হয়েছেন , যাঁরা একটা উদার আর্যধর্মের আবেষ্টনে সবাইকে টেনে আনতে চেয়েছেন I আধুনিক যুগেও দেখ, গোঁড়া ব্রাহ্মন কায়স্থ বৈদ্য যেমন বাংলা সমাজে আছেন, তেমনি ছিলেন রামমোহন -রবীন্দ্রনাথ -বিবেকানন্দ- অরবিন্দ-যাঁরা ধর্মকে গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করে সর্বজনীন করতে চেয়েছেন I এই সংস্কারকদের (এবং তাঁদের পূর্বগামীদের ) চেষ্টায় বাংলার অভিজাত ধর্মের বাইরে সৃষ্টি হয়েছে বাউল - ধর্ম যা প্রধানত নিম্ন শ্রেণীতে আবদ্ধ , কিন্তু যার গভীর ব্যঞ্জনা বাংলার অভিজাত গোষ্ঠীর মাঝেও সাড়া জাগায় I আমার বিশ্বাস , প্রত্যেক সমাজেই খুঁজলে পরে এমনিতর একটা প্রাণক্ষোভ দেখতে পাওয়া যাবে I এ সম্পর্কে অনেক কথা বলা যায় I আমি তোমায় শুধু ভাববার সূত্র ধরিয়ে দিলাম I
আজ যাই I আবার মনে করিয়ে দিও I স্নেহাশিস নিও I
____________________________________
৯
হৈমবতী
Shillong , 7 .8 .55
মাতঙ্গীকে আমি দেখি এক তন্বী শ্যামা কিশোরীর রূপে I ধর , কিশোরী রাধা যদি শ্যামলী হতেন, এই শ্যামা পৃথিবীর রূপ আর স্পর্শ যদি একটি চিন্ময় আভায় ঘনীভূত হত I জানি আমি তাঁকে বোঝাতে পারব না I শাস্ত্রে বলে তিনি জন্মেছিলেন কদম্ববনে , ষড়শীর চোখের দৃষ্টি হতে I কখন কোনও ১৫ /১৬ বছরের কুমারীর মাঝে এই মাতঙ্গী ক়ে দেখতে পাওয়া যায় - পুরুষের কামনা আর তাঁর কুমারী শুচিতার মাঝে থাকে একটা তীক্ষ্ণধার খড়গের ব্যবধান I বৌদ্ধদের প্রজ্ঞাপারমিতাতে ও এই ভাবটা আছে, রহস্য ভাষায় তাঁকে বলা হয়েছে ডোমের মেয়ে, চাঁড়ালের মেয়ে I শিবের হৃদয়ে উমার প্রতি অনুরাগের যে পূর্বছটা, তাই বুঝি মাতঙ্গী I মদনমোহন আর মদনমোহন দুয়ের মাঝামাঝি I যাক , বলে কিছুই বোঝে পারব না I একটু আভাস দিলাম মাত্র I
সাধনরাজ্যের ইতিহাসের কথাটা সংক্ষেপে বলি I একদিনে হয়ত সব কথা বলা শেষে হবে না I তুমি জের টেনে যেও I
অনেক সংস্কৃতির অনেক সাধনার ধারা এখানে মিশেছে কিন্তু তার মাঝে প্রাধান্য পেয়েছে তার মাঝে প্রাধান্য পেয়েছে আর্যসংস্কৃতিই I এই আর্যসংস্কৃতির সঙ্গে অনার্যসংস্কৃতি র সংমিশ্রন হয়েছে সমাজের নীচের স্তরে - এবং সেটা ক্রমে পরিশোধিত হয়ে আর্য ভাবনার অঙ্গীভূত হয়ে গেছে I এই ব্যাপারটা আজ চলছে I
আর্য সংস্কৃতির আবার দুটা ভাগ -একটা বৈদিক, আরেকটা অবৈদিক I বৈদিক সংস্কৃতির দর্শন হলো মীমাংসা , আর অবৈদিক সংস্কৃতির দর্শন হলো তর্ক I মীমাংসার চরম পরিণাম বেদান্তে , আর তর্কের সাংখ্যে I বেদান্ত বলেছে ব্রহ্মবাদের কথা, দেববাদ তার অন্তর্ভুক্ত I বলছে সর্বম খল্বিদং ব্রহ্ম I আর সাংখ্য বলেছে আত্মবাদের কথা I এই দুটি হলো আমাদের সমস্ত সাধনার এবং ভাবনার দার্শনিক ভিত্তি I দুটিকে চিরকাল আলাদা করে রাখা যায়নি ,তারা পরস্পরকে প্রভাবিতও করেছে I আমাদের বর্তমানের যে কোনও সাধানাতে বেদান্ত আর সাংখ্যের সংমিশ্রণ আছে I
সমস্ত আর্যসাধানার গোড়াতে একটা PSYCHOLOGICAL বিস্ফোরণ ঘটেছিল , যা আর্য সাধনার বৈশিষ্ট্য I পৃথিবীর আর সমস্ত সাধনা থেকে যা তাকে তফাৎ করেছে I এটা হলো চেতনার বিস্ফোরণে দেবতার অস্তিত্ববোধ I এই ভাবটি বৈদিক সাধনায় খুব স্পষ্ট I মূলে রয়েছে আবেশবাদ I দেবতাকে চাইতে গিয়ে আমি দেবাবিষ্ট হয়ে যাই, অনুভব করি আমিই দেবতা I 'আমিই দেবতা ' একথা বলতে আর কেউ সাহস করেনি এদেশ ছাড়া I
এই কটি হলো এদেশের সাধন বিজ্ঞানের মূল সূত্র I আজ যাই I তুমি এর পরের কথা গুলির জন্য খেই ধরিয়ে দিও I স্নেহাশিস নিও I
___________________
৮
হৈমবতী
২৪ .৭.৫৫
তুমি আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে সংকোচ কর না I আমার চিঠি লেখবার দিন তো নির্দিষ্ট থাকে, তোমার প্রশ্নের উত্তর সাধ্যমত দিতে আমি ত্রুটি করব না, আনন্দের সঙ্গেই দেব I জানতে চাওয়াটা তো অন্যান্য চাওয়ার মতো মানুষকে বাঁধে না , মুক্ত করেই দেয় I সুতরাং এ চাওয়া তো দোষের নয়.I 'মিছরির মিষ্টি মিষ্টির মধ্যে নয়' I
দক্ষিনের মিনাক্ষী দেবীকে আমি দেখিনি, আমার দক্ষিনে যাওয়াই হয় নি I সুতরাং তাঁর মাঝে মাতঙ্গীর রূপ ফুটেছে কিনা বলতে পারলাম না I আমার মনে এক মাতঙ্গী আছেন , আমি তাঁকে জানি , তাঁর কথা ই বলছিলাম I
তোমার মার্কন্দেয পুরান সম্পর্কিত প্রশ্নটা আরো ও একটু বিশদ করে জানাতে পার ? ঠিক কোন দেবীর চরিত্রের কথা, কোন অধ্যায়ে আছে জানলে আমার সুবিধা হয় I তাহলে বলতে পারি তার সঙ্গে শ্রী অরবিন্দের mother এর কী সম্পর্ক I আজ মার্কন্দেও পুরান ঘাটা ঘাটি করেও বুঝতে পারছি না I চন্ডীর শেষর দিকে কয়েকটি ভবিশ্য অবতারের কথা আছে I তার মধ্যে কেউ কী ? জানিও I
মহাকালী মহলক্ষ্মি মহা সরস্বতী - এই নাম কটি ই শ্রী অরবিন্দ মাত্র চন্ডী ত্থেকে নিয়েছেন I কিন্তু চন্ডী - বর্ণিত চরিত্রের সঙ্গে তাঁর mother এর তো মিল নাই I
যদি বেদান্তের দিক দিয়ে বোঝো তাহলে বলা চলে, সত - চিত -আনন্দ ইচ্ছা-জ্ঞান -ক্রিয়া -এই হলো ব্রম্হ এবং ব্রম্হ শক্তির স্বরূপ I আনন্দ ই ব্রম্হ শক্তির মুখ্য পরিচয় I সেই আনন্দ অভিব্যক্ত হচ্ছে ইচ্ছা জ্যানান এবং ক্রিয়াতে I শ্রী অরবিন্দের মহালাখ্মি আনন্দ, মহা সরস্বতী জ্ঞান , আর মহাকালী ইচ্ছা I তিনটি শক্তিকে তিনি সাজিয়েছেন ইচ্ছা আনন্দ এবং জ্ঞান এই ভাবে, আর জ্ঞানের সঙ্গে ক্রিয়াকে যুক্ত করেছেন , কেন না তাঁর দর্শনে জ্ঞান সক্রিয় I এই তিনটি শক্তি বিভূতির উর্ধ্বে , এবং তিনটিকে ধরে আছেন মহেশ্বরী I সামান্য ভাবে এই 'মহেশ্বরী' ক়ে' 'দেবী' বলতে পারা যায় I কিন্তু শ্রী অরবিন্দের এই পরিকল্পনার সঙ্গে তো চন্ডীর পরিকল্পনার মিল নাই I দর্শনের বিচারে বলতে গেলে চন্ডীর দেবী সাংখ্য সম্মতা আর শ্রী অরবিন্দের mother বেদান্ত সম্মতা----- তাও অপ্রচলিত বেদান্ত বাদের সঙ্গে তার মিল নাই I চন্ডীর সঙ্গে নাম সাদ্র্রিশ্য় ছাড়া দুটিতে আর কিছুর সাম্য তো দেখছি না I বরং চন্ডীর চরিত্র গুলি ই আমার কাছে একটু জটিল এবং রহস্যপূর্ণ বলে মনে হয় I যাক তোমার কাছ থেকে reference পেলে পরে এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য জানাব I যাই I স্নেহাশিস নিও I
___________________________________
৭
হৈমবতি
৩.৭.৫৫.
যখন যে অবস্থা আসে , তাকেই যদি বরণ করে নাও, তাহলে তারই মাঝে আলো ঝলসে উঠবে I এখন যে বিরাট নৈ:শব্দ্যের ভাব এসেছে, তাকেই দেখো মায়ের মহানিশার রূপ I সেও তো তুমি ই I সৃষ্টি তো কোন ও কিছু করা নয় - উত্সারিত হওয়া I root meaning টাও তাই I আমরা নিজের মাপে কিছু করতে চাই বলে তাঁর হাওয়ার বেগটা বন্ধ করে দিই I এই হলো অবিদ্যা I আর বিদ্যা হলো ওই স্তব্ধতার গহনে ডুবে থেকে দেখা, তিনি কি ফুটিয়ে চলছেন I দেখতে দেখতে তার ইচ্ছার স্বরূপটা বুঝতে পারি I তখন ফুলঝুরিটি তিনি আমার হাতে তুলে দেন I আমি তখন তিনি হয়ে যাই I এই তো একাধারে মুক্তি আর সিদ্ধি I কিছুই চেও না সুধা , শুধু চেয়ে চেয়ে দেখো, তাহলেই সব পাবে I
অনেকগুলো প্রশ্ন করেছ , একটি একটি করে জবাব দেব I দশ মহাবিদ্যার কথাটাই আগে তুলি I দশ মহাবিদ্যার প্রথম চারটি হলো basic বিদ্যাশক্তি - তার পরের চারটি হলো ওই মূলের ই বিভূতি I সত - চিত - আনন্দ সহজ হয়ে হয়েছেন ভুবনেশ্বরী I ভুবনেশ্বরীর আবির্ভাব ই হলো জগতের পরমার্থ I তারপর দেখছি বাস্তব জগতের ছবি ভৈরবী ছিন্নমস্তা ধূমাবতীতে I এই ত্রয়ীর রুপান্তরে ই বগলামুখী মাতঙ্গী আর কমলার আবির্ভাব I ভৈরবী ছিন্নমস্তা আর ধুমাবতী তে প্রাণশক্তির তিনটি প্রাকৃত বিভাব প্রকাশ পাচ্ছে I hunger ,sex ,আর death I ভৈরবী পরমাসুন্দরী হয়ে ও কপালমালিনী রুধিরলিপ্তস্তনী , মাতৃ স্তন্য রক্তে মাখা I বুভুক্ষার এর চেয়ে সুন্দর symbol আর হতে পারত না I এই বুভুক্ষা শুধু প্রানের নয় , মনের ওI মনের বুভুক্ষা সৃষ্টি করছে চিন্তা-বিক্ষিপ্ত চিন্তা এবং তাই গ্রাস করে নিজেকে পুষ্ট করতে চাইছে I কিন্তু বুভুক্ষার তর্পণ হচ্ছে কোথায় ? দেবী রসনা ক়ে নিজের মাঝে আকর্ষণ করেও প্রাণের বুভুক্ষা মনের বুভুক্ষা দুয়েরই রূপান্তর ঘটাচ্ছেন I ছিন্নমস্তা সম্ভোগের ছবি প্রকৃতি সেখানে বিপারিতরতাতুরা I
অর্থাৎ পুরুষ প্রকৃতির দ্বারা সম্ভুক্ত প্রাকৃত ভোগের এই রীতি -ভোজ্যকে আমরা ভোগ করছি না, সেই আমাদের ভোগ করছে I এই রীতির উপর চলছে প্রাকৃত গুনলীলা I সত্ত্ব রজ:তম:তিনটি গুন দেবী এবং তার দুটি সঙ্গিনী I কিন্তু তবু ও এ সম্ভোগ জ্ঞানীর দৃষ্টিতে তাঁর আত্ম সম্ভোগ - আমি আমার ই রুধির পান করছি , করাচ্ছি I মাতঙ্গির মূর্তিতে ঠিক ভাব ফুটিয়ে তুলতে দেখিনি কোথাও I ওটি হবে কিশোরী শ্যামার মূর্তি I হাতে বিবেকের অসি কিন্তু জ্ঞানের আলো ফুটেছে স্নিগ্ধ শ্যামশ্রী নিয়ে I ধূমাবতীতে ভোগের অবসানে প্রলয় , তা আর বিস্তার করে বলতে হবে না I কিন্তু তারই পালটি দেখছি কমলাতে- বিশ্বের সহস্রদল কমলের বিকাশে , নিত্য সৃষ্টির আসক্ত উল্লাসে I মোটামুটি এই তত্ত্ব I
ভালো থেক I স্নেহাশিস I
______________________________
৫
১৭ .৪ .৫৫
............... ভ্রু মধ্যে ধারণা সহজ হলে তাই করো I
সমস্ত সাধনার মূল কথা হচ্ছে --- যেষাং সময়ে স্থিতং মন : I
ভ্রু মধ্যে concentration যেমন থাকবে, তেমনি একটা ব্যাপ্তির বোধ ও থাকবে I সংকোচ আর বিস্তার দুটির ই ক্রিয়া একসঙ্গে চলবে I একটা বিন্দু থেকে ভাবনাকে যদি কদম্ব গোলকের মতো ছড়িয়ে দিতে পার, তোমার সত্তাকে উর্ধে - অধে আশেপাশে বিকীর্ণ করতে পার, তাহলেই বিশ্বের ছন্দের সঙ্গে তোমার জীবনের ছন্দ মিলবে I তার জন্য ভ্রু মধ্যস্থিতিকে সহজ করে নিতে হবে I এখন মনে হচ্ছে , ভ্রু মধ্যে আমি উজিয়ে যাচ্ছি I কিন্তু এ সংস্কার বর্জন করতে হবে I জানতে হবে , নিত্যকাল ধরেই তুমি ভ্রুমধ্যে ই আছ I ওই তোমার স্বধাম বা আপন ঘর I এক এক সাধকের এক এক জায়গায় স্থিতি হয় , স্বভাব ও সংস্কারের অনুকূলে I যার যেখানে স্বধাম , তার সেখানে থাকাই ভালো I সাধনায় আয়াস বর্জন করতে হবে I অত্যন্ত সহজ থাকবার চেষ্টা করবে Iপাখির যেমন পাখা আছে, মনে করবে তোমার ও তেমনি পাখা আছে - মুক্ত আকাশে অবার দুটি ডানা I তুমি কখনো গাছের ডালে বসতে পার, মাটি তে ও নেমে আসতে পার-- -কিন্তু যে কোনও মুহুর্তে তুমি দুই পাখা মেলে দিতে পার , এটি ভুলো না I
অতীত নিয়ে কখনে ভাবনা করবে না I অনুশোচনা করবে না কিছুর জন্যেই I বন্ধুর পথ ওঠা- নামা আছে ওই কিন্দু ধ্রুব জেনো - তার ভিতর দিয়েই তুমি এগিয়ে চলছ I একটা অবস্থা আসে যখন সব কিছুই সাধনার অনুকূল হয় I এমন কী সাময়িক পতনও I তখনই জানবে - দেবতা তোমার মধ্যে জেগেছেন I তোমায় হাতে ধরে নিয়ে চলেছেন I তুমি আর নিজের শক্তিতে চলছ না, চলছ তাঁর শক্তিতে I তাঁর ভালবাসায় তখন তোমার অন্তরের মধু I তুমি তাইতেই হর্ষত ফুল্লা সব সময় I
নব বর্ষের স্নেহাশিস নিও I প্রসাদ সুমুখী হও , আলোতে আনন্দে বীর্যে অনুপমা হও I
_________________________________
৬
হৈমবতি
৫.৬.৫৫
আকাশ যে আমাদের কতখানি দেয়, তা বলবার নয় I এক নজরে অনেক দূর যখন দেখতে পাই, তখন দেখি - বিরাট বসে আছেন ধ্যান গম্ভীর হয়ে I অন্তর আলো আর আনন্দে ভরে ওঠে I কেন মানুষ সহর সৃষ্টি করলো ? যান্ত্রিক সভ্যতা কেন প্রকৃতির সঙ্গে বিচ্ছেদ এনে আমাদের অমানুষ করে তুলল ?
যন্ত্রের উপকারিতা অস্বীকার করিনা I কিন্তু তাকে দেবতা বলে তা পূজা করতে পারিনা I সে আমায় বিশ্রাম দেবে , মুক্তিই দেবে, অঅবার দাস হবে I আমিও তার চাপে পিষে মরব কেন ? সহর গুলোকে আমার মনে হয় পাকস্থলীর মতো I সেখান থেকে রস ছড়িয়ে পড়ুক দেশের সারা গায়ে, তাতে আপত্তি করি না I কিন্তু তাকে আড়ালে রাখতে চাই - অত নির্লজ্জতা ক়ে প্রকট করতে চাই না I
যাক গে , বাজে বকছি I একদিন মানুষ আবার প্রকৃতির কলে ফিরে যাবে , অথচ যন্ত্র - সম্পত্তি - ও তার থাকবে, এই আশা ই করছি I
...................তমভাবের কথা বলছ, তার কারনটা মনে হচ্ছে শারীরিক I তবে প্রত্যেক অবস্থাকেই utilise করা যায় I To struggle against কিন্তু পথ নয় - পথ হচ্ছে to try to understand
তমভাব এসেছে , তাই সই I চলে যাও তারও depth - এ, দেখবে - শিব স্বরূপ প্বসে আছেন আকাশ হয়ে I ওই আকাশের দেখা যেই পাবে, অমনি দেখবে তমিস্রার মাঝে উষার আলো ফুটতে আরম্ভও করেছে I এমনি করে প্রকৃতির যে কোনও গুনের ভিতর থেকে তার শুদ্ধ রূপটি আবিষ্কার করা চলে I মনের attitude এর উপর অনেক খানি নির্ভর করে I never worry I শুধু জেনে রাখো, যাই আসুক না কেন , তোমায় স্বচ্ছন্দ হয়ে তাকে deal করতে হবে I মুখে থাকবে মহিষ মর্দিনীর সেই প্রসন্ন স্মিতহাস্য I she is dealing with the asuric force with a smile !
যাই I ভালো থেকো I স্নেহাশিস I
______________________________________________
৪ ২০ .৩. ৫৫
প্রাণ জয়ের সাধনায় একটি কথা মনে রাখতে হবে , প্রানের নিরোধ নয় , তার রূপান্তরই হলো এই সাধনার লক্ষ্য I মধ্যম চরিত্রে দেবগনের স্তুতিতে এই কথার ইঙ্গিত, একাধিক জায়গায় অসুর দিব্য হোক এই ছিল সংগ্রামের তাত্পর্য I ব্যবহারিক জীবনে এটি সিদ্ধ হয় প্রবৃত্তির মোড় ফিরিয়ে দিয়ে I মোড় ফেরানোর কথাটাতেও নিগ্রহের ভাব কিছুটা এসে যায়, কিন্তু আমি নিগ্রহের কাটা বলছি না I আবার প্রানের মাঝে একটা বিকৃত এবং মুড় রস পিপাসা আছে I এই রস পিপাসাকে উর্দ্ধায়িত করাই হলো প্রাণ জয়ের লক্ষ্য I রসবর্জনের কথাটা খুব সহজেই আমাদের মনে আসে অএবং খানিক বর্জন যে প্রথম অবস্থায় প্রয়োজন নয়, তাও বলছি না I কিন্তু আসল লক্ষ্য হলো রসের শোধন I বৈদিক ঋষি পবমান সোমের কথা বলেছেন I পাবামান শব্দ টার অর্থটাই হচ্ছে যা ক্রমশ :pure হয়ে উঠছে I purity সাধনার দুটি সংকেত যেতে পারে I দেহ- বোধকে অত্যন্ত স্বচ্ছ করে নিতে হবে , এই হলো গোড়ার কথা I সেই স্বচ্ছ দেহকোষের যুগপত একটা ব্যাপ্তি এবং উর্দ্ধয়ানের ক্রিয়া নিয়ে আসতে হবে I ব্যাপ্তির ক্রিয়া সিদ্ধ হোতে পারে সমস্ত শরীরের নাড়ীতন্ত্রে রসের অনুভুতিকে সঞ্চারিত করতে পারলে I যা কিছু তুমি অনুভাব করছ ,তা বিশেষ কোনও ইন্দ্রিয় দিয়ে নয়, কিন্তু সমস্ত শরীরের নাড়ীজাল দিয়ে I একটা গাছ নিস্পন্দ হয়ে দাড়িয়ে যেমন আলো বাতাসকে শুষে নেয়, তেমনি করে তোমার অন্তরের প্রাণকে আহার দেওয়া I যাই তোমার মধ্যে প্রবেশ করছে তাই আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, আবার মেরুতন্ত্রে সংহতও হচ্ছে I মোটামুটি এইটিই হলো ব্যাপ্তির ক্রিয়া I সেই সঙ্গে মেরু তন্ত্রে একটি অধ :স্রোত ক়ে উর্দ্ধমুখী ভাবনা করা --- এই হলো উর্দ্ধয়ানের ক্রিয়া I খুব কঠিন মনে করনা, অল্প অভ্যাসেই এটা সিদ্ধ হতে পারে I 'ভ্রুবোর্মধ্যে প্রাণমাবেশ্যা সম্যক'--- গীতাতে এই সংকেতের কথা আছে I ভ্রু মধ্য একটা মাঝামাঝি station I হৃদয়েও তেমনই স্থিতি হতে পারে অথবা হতে পারে মুর্ধায় I যদি উপরে কোথাও স্থিতি হয় , তাহলে বাইরের অভিঘাতে যে প্রাণ স্রোত বইতে থাকে, তাকে উজানের দিকে নিয়ে যাওয়া সহজ হয় I
নিজেকে দেবীর ভাবে ভাবিত রেখো Iবলেছিলাম বীর্য থাকবে সংগ্রামে , কিন্তু মুখের হাসিটি যেন কোথাও না মিলিয়ে যায় I আর একটি কথা এর সঙ্গে যোগ করব, একটা অমৃত পান জনিত আনন্দের আবেশ যেন তোমার মাঝে সব সময় থাকে I
মহিষাসুর মর্দিনী মধু পানও-উতফুল্লা I এটা দিব্য প্রানের নেশা I সোজা কথায় একটা বড় নেশা না থাকলে ছোট নেশার মোহ কাটিয়ে ওঠা যায় না I জোর করে নেশা ছাড়ানো ও যায় না I এইখানেই উর্দ্ধায়ানের বা sublimation এর কথা ওঠে ! কিন্তু sublimtion শুধু নিচের থেকে উপরের দিকে ঠেললে হয় না, উপর থেকে আকর্ষণ ও করতে হয় I এই জন্যে ভ্রু মধ্যে চিত্তের সহজ ধারণা প্রাণ জয়ের অনুকুল I আজ এই পর্যন্ত I স্নেহাশিস I
_______________________________________
৩
২৭ .২. ৫৫
সাক্ষীভাব থেকে বা আকাশভাবনা থেকে সংস্কার মুক্ততা আসতে পারে I অহং এর কুন্ডলীটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে I কোনোও কিছু না চেয়ে শুধু যদি নিজেকে ফাঁকা বা রিক্ত করে দেওয়া যায় --------- যেমন ধর, গভীর রাতে তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর তখন আকাশের নৈ :শব্দ্যক়ে তোমার হৃদয়ে নেমে আসতে অনুভব করলে যেন তোমারই সত্তার মাঝে পৃথিবী নি:সুপ্ত হয়ে আছে, তাহলে যে অপরূপ শান্তির ভাবটি আসে, ওই সংস্কার মুক্ততা আনবার সোপান .I general থেকে particular - এ আসা, সব কিছু ই deduce করা from one existence - এই ভাবটাও তাকে সাহায্য করে I শেষ পর্যন্ত আসে সহজ মানুষের একটা স্নিগ্ধ ঔদার্য - যেমন ব্যক্তি সম্পর্কে তেমনি মতবাদ সম্পর্কেও I
এমন করে যদি নিজের চারিদিকে আকাশের মতো বিরাট স্বচ্ছ উদার এবং বাধা -বন্ধোহীন একটা বিপুল্য ক়ে সব সময় অনুভব করো, যদি অনুভব করো ওই শৈবিসত্তা তোমায় আচ্ছন্ন আবিষ্ট করে রেখেছে দেহ প্রাণ - মনের অনুতে অনুতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে , তাহলে প্রাণ জয় সহজ হতে পারে I প্রাণ জয়ের একটা উপায় তার গতি কে স্তিমিত করা এবং অন্তর্মুখ করা .I মনে কারো তুমি যেন প্রশান্ত সমুদ্রের মতো , বাইরে ভিতরে যা কিছু, তোমার মাঝে এসে লয় হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তুমি কিছুকে কাউকে ধরতে ছুটে যাচ্ছ না - তাহলে নিজে থেকেই একটা পথ পেয়ে যাবে I গীতার সেই শ্লোক টা মনে পরছে তো ?-আপুর্জমান্চল প্রতিষ্ঠম ......ইত্যাদি ?
মহিষ মর্দিনী ই প্রাণকে জয় করেছেন - বীর্য প্রশান্তি করুণা তিনের সমন্বয়ে I. তাঁর চরণ সিংহের উপর I সিংহ তো বুঝছ ই শুদ্ধ রাজা বা শুদ্ধ প্রাণ I ধর , সিংহ বীর্য I একটা গভীর আত্মপ্রত্যয় আছে তোমার মাঝে , নিজেকে অনুভব করছ মহাশক্তির বাহন রূপে I এই অনুভবটাই অসুরকে বা প্রাণকে নির্জিত করবার পক্ষে যথেষ্ট I কিন্তু বীর্যের সঙ্গে শান্তি থাকবে, থাকবে স্বাচ্ছন্দ I আর , একটা ব্যাপ্তির ভাব I সব ব্যাপারটা যেন আকাশে লীলা চ্ছালে হচ্ছে , তাই তোমার মুখে ফুটে উঠছে স্মিত হাস্য I
এইটি ই তোমার কল্পরুপ I নিজের শুদ্ধ চিত্তের দর্পনে নিজেকে দেখো I নিজের রূপে নিজে বিভোর হও I কিন্তু উচ্চ্ছসিত হও না I অহংকৃত হও না I বা কারুণ্য হারিও না I অসুরকে ও যে তুমি আঘাত করছ, তাও করছ পরম মমতায় I তুমি যে মা I
অতিচেতনায় প্রতিষ্ঠাই আগে খুঁজতে হবে I সুষুম্নার পথ টি খুব পরিষ্কার হওয়া চাই .I এখানে তুমি গুহাতিত I কমলের দল বেয়ে প্রাণ উজিয়ে চলেছে, cortex - এ এসে সহস্র দল হুয়ে আনন্দে ছড়িয়ে পড়ল I সেইখানেই স্থিতি I ওই স্থিতি টুকু অভ্যস্ত হলে তারপর নামার কথা I অবচেতনা তখন কিন্তু রুপান্তরিত হয়ে যায় I যাকে আগে মনে করেছিলে কাদামাটি , তাকে দেখতে পাও যেন প্রান্পঙ্ক ,কমল দলের মূল সেইখানে , প্রতিমুহুর্তে তা সুধারস শোষণ করে ওই মহাশূন্যে ফুল ফুটিয়ে চলেছে I
আজ এই পর্যন্ত I একটা কবিতার offprint পাঠালাম I স্নেহাশিস I
_______________________________________
২
শিলং
৬.২.৫৫
তোমার ১ লা তারিখের চিঠি পেলাম I তোমার সব প্রশ্নের বিস্তৃত উত্তর এক চিঠিতে হবে না I আজ মোটামুটি লিখছি, তুমি এই প্রসঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেও - ক্রমে ক্রমে সব পরিষ্কার হয়ে আসবে I একটা মূল ভাবকে যদি ধরতে পার, ক্রমে দেখবে তার ভিতর থেকেই আর সব ভাব বেরিয়ে আসছে I চিত্তের সংস্কার মুক্ততা তার জন্য বিশেষ প্রয়োজন I ওই যে স্বচ্ছ নীলাকাশের ভাবনা তার মাঝে হৃদয় টিকে অতি সহজে মেলে দিয়ে নিস্তব্ধ হুয়ে থাকা - ওতেই তোমার বুদ্ধি শুদ্ধ হবে , অনেক কিছু আপনা হতেই তখন বুঝতে পারবে I
মহাশক্তি সম্বন্ধে চন্ডীর বিশ্লেষণ আর শ্রী অরবিন্দের বিশ্লেষণ ঠিক এক নয় I শ্রী অরবিন্দ ব্যাখ্যা করেছেন COSMIC দিক থেকে, ontological দিক থেকে, চন্ডীর বিশ্লেষণ সাধানার দিক থেকে I অবশ্য এ কথাটাই যতটা বিরোধ সূচিত হচ্ছে, আসলে এতটা বিরোধ কিন্ত নাই I
দেবী স্বয়ং যুদ্ধ করছেন মহিষ মর্দিনী রূপেই I প্রথম চরিত্রে এবং উত্তম চরিত্রে যুদ্ধ হচ্ছে প্রতিভূর মারফতে I একটি তে যুদ্ধ করছেন বিষ্ণু, দেবী রয়েছেন আড়ালে, আর একটিতে যুদ্ধ করছেন চন্ডিকা, সেখানে ও দেবী নিজের দেহ হতে তাঁকে নিষ্কাশিত করে আড়ালে রয়েছেন I এর ব্যান্জনাটা এই - প্রাণ লোকের উপরে এবং নিচে কাজ করতে গেলে একটা Transcendence এর অনুভব ক়ে জাগিয়ে রেখে কাজ করতে হয়. I নইলে sub -conscious বা super - conscious দুই ই আমাদের সত্তাকে অব্যক্তের প্রভাবে আছন্ন বা আবিষ্ট করে রাখতে পরে I এই আবেশ দূর করবার জন্য বিবেক জ্ঞান অপরিহার্য I মধ্য ভূমিতে প্রাণ জয় দ্বারা এই বিবেক জ্ঞান অর্জিত হতে পারে I প্রাকৃত ক্ষেত্রে ও দেখো, আমাদের চেতনা প্রাণ - বাসনার সঙ্গে কিরকম জড়িয়ে আছে I প্রানের স্ফুটতম অভিব্যক্তি হয় ভাবে I কিন্তু সেই ভাবের পরে যদি জ্ঞানের আলো এসে না পড়ে, তাহলে ভাবেও একটা আলোর আড়াল রচিত হতে পারে. I এই আলোর আড়ালটাই শুম্ভো নিশুম্ভো বধের মূল কথা I শুমভো শব্দ এসেছে শুভ বা শুম্ভ ধাতু হতে - যার অর্থ হচ্ছে to shine I শুভ্রতার ও একটা মোহ -সঞ্চারক শক্তি আছে যাকে গীতাকার সাত্ত্বিকাতার বন্ধন বলেছেন I ইসপনিষাদে আছে বিদ্যা আর অবিদ্যা দুই ই অন্ধতমে নিয়ে যায় I অবিদ্যার অন্ধ - তম হচ্ছে প্রথম চরিত্রের 'যোগনিদ্রা জগত্পতে:', আর বিদ্যার অন্ধতম হচ্ছে উত্তম চরিত্রে শুম্ভো I চাই গুনাতীত ভূমিতে প্রতিষ্ঠা এবং সেই খান থেকে গুন- গুলোকে বশে আনা , তাদের দিব্য ভাবনার অনুকূলে খেলিয়ে নেওয়া I
এই জন্যই বিবেক জ্ঞান এত দরকার I প্রাণ বাসনা শুদ্ধ না হলে বিবেক জ্ঞান হবে না I. তাই মহিষ্মর্দিনির সাধনা সবার আগে. I শুদ্ধ প্রাণ নিয়ে হানা দিতে হবে শুম্ভার রাজ্যে -------- বেদে যাকে অসুরের স্বর্ণ পুরি বলে বর্ণনা করা হয়েছে I শুম্ভো বধ হলে পরে তোমার মাঝে যে বিষ্ণু চৈতন্য বা ব্যাপক চৈতন্য জাগবে , তাই দিয়ে cosmic ignorance এর root এ আঘাত করা--------- এই হল প্রথম চরিত্রের বিষয় I logical scheme এর প্রথম চরিত্র, কিন্তু personal সাধনায় ও টি আসে সবে শেষে I. শ্রী অরবিন্দের transformation of inconscience এই প্রথম চরিত্রের সাধনা , কিন্তু তার জন্য সাধক ক়ে আগে বিষ্ণু হতে হবে I আজ এই পর্যন্ত I যাই I . হৈমবতির প্রজ্ঞার আলো তোমাৰ হৃদয়কে আলোকিত করুক I
_________________________________________________
শিলং
২৩.১.৩৫
আমাকে চিঠি লিখতে সংকোচ করো না I যখন যা তোমাদের জানবার আগ্রহ হবে, আমায় স্বচ্ছন্দে জিজ্ঞাসা করো , আমি আনন্দের সঙ্গেই জবাব দেব I
তুমি জিজ্ঞাসা করেছিলে 'তারা' ক়ে নীল সরস্বতী বলা হয় কেন I দশা মহাবিদ্যার প্রথম তিনটি বিদ্যাতে যথা ক্রমে প্রজ্ঞা শক্তির সত চিত ও আনন্দ এই তিনটি রূপ দেখানো হয়েছে I কালী শুদ্ধ সত্তা রুপিনী, তারা শুদ্ধ চিদ্রুপিণী এবং শোরষী শুদ্ধ আনন্দ রুপিনী,তারাচিন্ময়ী ,প্রজ্ঞারুপিনী I বৌদ্ধেরা প্রজ্ঞা পারমিতার উপাসনা করতেন, তারা আবার বৌদ্ধদের ও দেবী I এই প্রজ্ঞার রূপ ফোটে অরুপের ভূমিতে objecively (অবশ্য suprasensuous way তে ) আকাশের আনন্ত্যে, subjectively বিজ্ঞানের আনন্ত্যে I আকাশের আনন্ত্যের symbol হলো নীলিমা, আর বিজ্ঞানের symbol হলো সরস্বতী I এই দুটির প্রতি ইঙ্গিত আছে তারাতে, তাই তিনি নীল সরস্বতী Iস্বচ্ছ নীলাকাশের দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থাকলে অনুভব হয় যেন ওই নীল এর রোমকূপ ভেদ করে শুভ্র একটা আলো ঠিকরে পরছে I ওই নীলের আলো (ঠিক নীল আলো নয় কিন্তু ) ধরে তারা অনুভব আনা যেতে পারে I সেই আলোর মূলে যে সন্মাত্র তাই কালী , আর তার যে আনন্দ টলমল ঐশ্বর্য , তাই সরশী Iএই সবটা আবার সহজ হয়েছে 'ভুবনেশ্বরী তে' I আশা করি বুঝতে পেরেছ I
চন্ডী সম্বন্ধে যে প্রশ্ন করেছ, তার জবাব তো এক কথায় হয় না, তুমি জিজ্ঞাসা করে যেও , আমি বলে যাব I
তত্ত্বে প্রবেশ করতে হলে অন্তর- মুখ হয়ে ধারনা করতে হবে , এ তো বুঝতেই পারছ Iচন্ডীর চরিত্রের তিন দেবতা -মহাকালী মহালক্ষ্মী আর মহা সরস্বতী Iআমরা মহিষাসুরমর্দিনী মহালক্ষ্মীর -ই পূজা করে থাকি বছর বছর I এঁকে দিয়ে ই সাধনা আরাম্ভো করা উচিত Iসাধনার একটা logical scheme আছে , আর একটা psychological I বোঝবার জন্য logical scheme আর হাতে- কলমে কাজ করবার জন্য psychological scheme I মহাকালীর অবস্থা হল জগত যখন একার্ণবিকৃত চিত্ত যখন প্রলীন তখনকার অবস্থা Iএ অবস্থায় সাধনা আরম্ভ হতে পারে না I তাই মহালক্ষ্মী যেখানে মহিষা সুর বধ করছেন , সেই ভূমি থেকে সাধনা আরাম্ভো করে অচেতন ভুমিতে নামতে হবে এবং অতি চেতন ভূমিতে উঠতে হবে I এক মহিষাসুরের সঙ্গেই দেবী প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করছেন,আর দুটিতে যুদ্ধ করিয়েছেন নিজে আড়ালে থেকে মহিষ প্রাণ শক্তির প্রতীক পুরানে যম মহিষ বাহন , কেননা মৃত্যু ই প্রানের অধিপতি I
প্রাণকে বশে আনতে হবে এই দিয়ে সাধনার শুরু তার জন্য দেবীকে তোমার মধ্যে জাগাতে হবে , সমস্ত চিত্তবৃত্তির বা চিত শক্তির সংহরণ দ্বারা I এই হলো দেবতা দের মিলিত তেজে দেবীর উত্পত্তি I যোগের ভাষায় ব্যাপারটা হছে প্রত্যাহার থেকে প্রাণায়াম I আমি বায়ু ধারনার কথা বলছি না - সুক্ষ্ম প্রানের সংযমের কথাই বলছি Iএইটি প্রথম করণীয় তাইতে তোমার মধ্যে যে সুষমা , যে শ্রী ফুটবে, সেই তোমার মহালক্ষ্মী রূপ মায়েরা এই দিব্য শ্রী দিয়েই পুরুষের প্রমত্ত প্রাণশক্তিকে বশে আনতে পারে. এই হলো Practical life -এ এই সাধনার একটি প্রয়োগ কথাটা ভেবে দেখো Iআজ যাই I স্নেহাশিস নিও
_____________________________________
পত্রং পুষ্পম
শ্রী অনির্বাণ
ভূমিকা
জীবনবৃক্ষের অজস্র পুস্পচ্ছ্বাসের মতো অজস্র পত্র I তার মধ্যে কয়েকটি সম্পাদিত করে সংকলিত হলো তিনটি গুচ্ছে I
প্রথম গুচ্ছটি সুলেখিকা সুধী জিজ্ঞাসু শ্রীমতি সুধা বসুকে লেখা I শাস্ত্রীয় এবং অন্তরজীবন - সম্পর্কিত নানান প্রশ্নের মীমাংসার ফাঁকে ফাঁকে উছলে - ওঠা জীবন দর্শনের নানান টুকরো গুরুকথা এবং লঘুকথা I
দ্বিতীয় গুচ্ছটি লেখা বিদগ্ধ সুধী শ্রী অবনীভূষণ চট্টোপাধ্যায়ক়ে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যাঁকে তাঁর শেষ কাব্য গ্রন্থ 'দশমী ' উত্সর্গ করেছিলেন I সুহৃতসম্মিত 'অনর্গল ' ভাষণের সহজ আনন্দে ভরপুর কোন কোন চিঠিতে হঠাত যেন বেজে ওঠে 'ক্ষনিকার ' সুর I ৩৬ নং পত্রে আছে তার জীবনের গোপন সুধাপাত্র হৈমবতী দর্শনের কথা , যেটি তাঁর 'সমস্ত জীবনের যত কিছু পাওয়া ' আর দেওয়ার অক্ষীয় মাণ শতধার উতসো I
তৃতীয় গুচ্ছের প্রাপিকা হলেন এলাহাবাদের ভক্ত কবি শ্রীমতি অমিতা মজুমদার Iএতে পাই অন্তর- জীবন রচনার কয়েক ঝলক আলোক সূত্র I
তিনটি গুচ্ছের মধ্যেই জেগে আছে তাঁর প্রজ্ঞাকৌতুকী হৃদয়, 'ভুবনের গভীরে পুরূষউত্তমের হৃদয় স্পন্দন শোনার জন্য অনুক্ষন উতকর্ণ হয়ে I তিনটি গুচ্ছের মধ্যেই অন্ত:স্রোতা হয়ে বয়ে চলেছে 'এক নি:শব্দ সমুদ্রভিসারিণী গতি ' I তিনটি গুচ্ছই কাউকে -না কাউকে উপলক্ষ্য করে তাঁর স্বগত ভাষণ, তাঁর অলিখিত গ্রন্থ উত্তরায়ণের এক একটি অক্ষর I
Replies